রোপা-আমন মৌসুমে কিশোরগঞ্জেরতাড়াইলে আমন ধানের আবাদিবিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ একদিনআগেও ছিল চারিদিকে সবুজেরসমারোহে ঘেরা। দূর থেকেদেখে মনে হয়েছিল, আমনধানে সবুজ শীতল পাটিতেবিছিয়ে রেখেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেরসমতল ও অসমতল ভূমি।মৃদু হাওয়ায় ধানের সবুজ চারারগায়ে লেগে হেলেদুলে নাড়াদিচ্ছিল। যেদিকেই তাকানো হতো, সেইদিকেই সবুজের বিস্তীর্ণ ফসলেরমাঠ। সবুজ ধানে প্রকৃতিঅপরূপ সাজে সেজেছিল। শ্রাবণেনির্মল আকাশ ও সবুজেরসমারোহে এ ধরা যেননতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছিল।কিন্তুগত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তা যেন আজ মরণ কামড় দিয়েছেকৃষকের পেটে।
সরেজমিনেদেখা যায়, উপজেলার ৩নং ধলা, ৪নং জাওয়ার, ৫নং দামিহা, ৬নং দিগদাইড়, ৭নংতাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া ১নংতালজাঙ্গা, ২নং রাউতি ইউনিয়নের প্রায় ৭’শ হেক্টর জমি পানির নিচে।
কৃষকদেরসঙ্গে কথা বলে জানাযায়, এবছর জমিতে তারাবিনা সেভেন ৮, হাইব্রিডবিধান -৭ ,২৮ ,২৯,৪৯, ৫২, বায়ার কোম্পানিরধানী গোল্ড, তেজ ওপেট্রোকেম কোম্পানির পাইওনিয়ার এগ্রো-১২ জাতেরধান রোপণ করছেন।
জাওয়ার ইউনিয়নের কৃষক বাহারউদ্দিন বলেন, আমি ৪০ কাটা জমি রোপন করেছি এক সপ্তাহ হলো।কিন্তু আজ সব পানির নিচে।আমি সর্বহারা হয়ে গেলাম। বোরগাঁও গ্রামের গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার ৮ কাটা ক্ষেতধান বের হওয়ার পথে কিন্তু এখন পানির দুই হাত নিচে ডুবে আছে। ধলা ইউনিয়নের জুয়েলমিয়া বলেন, ৮০ কাটা জমির মধ্যে ৬০ কাটা জমি রোপন কাজ শেষ হয়েছিল, বাকি জমি রোপনেরজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সকল জমিই এখন পানির নিচে। তাড়াইল-সাচাইলইউনিয়নের উজ্জল ভূঞা বলেন, কয়েকটি বন মিলিয়ে আমার প্রায় ২ একর জমি রোপন হয়েছিল।কিন্তু বৃষ্টির পানি সব শেষ করে দিয়েছে। এভাবে আরো অনেক কৃষক তাদের চোখের পানিছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার সম্বল পানির নিচে ভাসছে।
তাড়াইল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমারসাহা জানান, চলতি মৌসুমেধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেকৃষক। এ বছর হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল৭ হাজার ৫শত ৫৫ হেক্টর। কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৭’শ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশিআমন রোপণ হয়েছে ।
তিনিআরো জানান, আবহাওয়ার কারণে মাঠের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানাবৃষ্টিতে রোপা-আমন ধান ৮৭০ হেক্টর এবং অন্যান্য ৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন একটি রিপোর্ট আপাতততৈরি করেছি। তবেকি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তাএখনো নিরূপণ করা হয়নি। বিস্তারিতক্ষয়ক্ষতির পরিমানটা পানি নেমে গেলে বুঝা যাবে। সরেজমিন গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে।