থানকুনি; যা গ্রামবাংলার সর্বত্র পাওয়া যায়। ছোট ছোট পাতার এই গাছ মানবদেহের জন্য অনেক উপকারি। এর ল্যাটিন নাম Centella Aciatica এবং ইংরেজি নাম Indian Pennywort.
থানকুনি পাতা কিংবা থানকুনি শাক- যে যাই বলুন কেনো, উপকারিতার দিক থেকে এর জুড়ি মেলা ভার। উল্লেখযোগ্য কোনো স্বাদ না থাকলেও বাংলাজুড়ে অতি পরিচিত নাম থানকুনি; যা ব্যবহৃত হয় অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে।
যে প্রক্রিয়ায় খান না কেনো, থানকুনি পাতা ও গাছ মানবদেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউমিনিটি (প্রতিরোধ শক্তি) তৈরি করে। তাই চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে নিয়মিত থানকুনি খেলে আপনি অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবেন।
এবার আসুন, জেনে নেওয়া যাক থানকুনির গুণাবলী:
১. বেগুন/পেঁপে/কাচাকলার সঙ্গে থানকুনি পাতা মিশিয়ে রান্না করে এক মাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২. সকালে খালিপেটে এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চা-চামচ শিউলি ফুলের পাতার রস মিশিয়ে চার-পাচঁদিন খেলে জ্বর নিরাময় হয় এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩. আম গাছের অল্প পরিমাণ ছাল, আনারসের একটি কচিপাতা, কাঁচাহলুদের রস ও ৪/৫টি থানকুনি গাছ শেকড়সহ ভালো করে ধুয়ে একত্রে বেটে রস করে খালিপেটে খেলে পুরোন পেটের পীড়া ভালো হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা অনেক বেশি কার্যকর।
৪. আধা কেজি গরুর দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি ও ১৭৫ গ্রাম থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে এক সপ্তাহে গ্যাস্ট্রিক ভালো হয়।
৫. সামান্য চিনিসহ দুই চা-চামচ থানকুনির রস খেলে সঙ্গে সঙ্গে খুসখুসে কাশির উপশম হয় এবং এক সপ্তাহ খেলে কাশি পুরোপুরি নিরাময় হয়।
৬. প্রতিদিন সকালে খালিপেটে চার চা-চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে সাতদিন খেলে রক্তদূষণ দূর হয়।
৭. জন্মের পর যেসব শিশু কথা বলতে দেরি করে অথবা যাদের কথা অস্পষ্ট, সে ক্ষেত্রে এককাপ ঠাণ্ডা দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ থানকুনি পাতার গরম রস ঠাণ্ডা করে এর সঙ্গে ২০/২৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে কিছুদিন খাওয়ালে অত্যন্ত কার্যকর উপকার পাওয়া যায়।
৮. প্রতিদিন সকালে ৫/৭টি থানকুনি পাতা চিবিয়ে সাতদিন খেলে আমাশয় ভালো হয়। থানকুনি পাতা বেটে এর সঙ্গে চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার দুই চা-চামচ খেলে আমাশয় ভালো হয়।
৯. থানকুনি পাতা বেটে গরম ভাতের সঙ্গে খেলে পেটব্যথা ভালো হয়।
১০. প্রতিদিন সকালে এক চা-চামচ থানকুনির রস, ৫/৬ ফোঁটা হলুদের রস এবং সামান্য চিনি ও মধুসহ একমাস খেলে লিভারের সমস্যা ভালো হয়।
১১. যদি মুখ মলিন হয়, লাবণ্যতা কমে যায় তবে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধ দিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত করলে উপকার পাওয়া যাবে।
১২. দেহের কোথাও থেঁতলে গেলে থানকুনি গাছ বেটে অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে উপকার পাবেন।
১৩. থানকুনি পাতা বেটে ঘিয়ের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে ক্ষতস্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
১৪. অপুষ্টি ও ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে গেলে পুষ্টিকর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
১৬. মলের সঙ্গে শ্লেষ্মা গেলে, মল পরিষ্কারভাবে না হলে, পেটে গ্যাস হলে, কোনো কোনো সময় মাথাধরা এসব ক্ষেত্রে ৩-৪ চা চামচ থানকুনি পাতার গরম রস ও সমপরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।
১৭. ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হলে, সর্দি হলে থানকুনির শেকড় ও ডাটা শুঁকিয়ে গুঁড়া করে ওই গুঁড়া নস্যি হিসেবে ব্যবহার করলেও পাওয়া যায়।