
গণপূর্তের সাবেক মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এবং প্রকৌশলীদের নামেও একাধিক মামলা হয়েছে। সেই সাবেক মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এবং প্রকৌশলীদের আস্থাভাজনরা এখনও অধিদপ্তর/ সার্কেলে আরাম আয়েশে অফিস করছেন। সাবেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে গেছে। সাবেক মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এবং প্রকৌশলীদের আস্থাভাজনদের সিন্ডিকেট এর পার্টনার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। নিয়োগ বানিজ্য, বদলী বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য করে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন তাঁরা।
আতিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর। যে কয়েকজন প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলী রয়েছেন; তাদের মধ্যে একজন তিনি। ঘুরে ফিরে ঢাকার এক ডিভিশন থেকে আরেক ডিভিশনে বদলি হন! ঢাকা ছাড়তে হয়নি, এমনকি ঢাকা যেন তাকে ছাড়তেই না। কেন! কি করণে?
জানাগেছে, চাকুরী জীবনের প্রায় বিশ বছরের শিক্ষানবিশকাল বাদে প্রায় পুরোটা সময় ঢাকায় কাটিয়েছেন। বিগত দিনে মন্ত্রী, সচিব, প্রধান প্রকৌশলী আর প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের কোটায় মূলত তিনি নিজের ‘ইচ্ছেমাফিক’ বদলি করিয়ে নিয়েছেন। যা এখনো অব্যাহত আছে। সবশেষ গত ১৪ জুলাই তাকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ-৩ এ তাকে বদলি করা হয়। এ দুটি বিভাগই গণপূর্তের বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং লোভনীয় পোস্টিং হিসেবে বলা হয় এ দপ্তরে।
আতিকুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, কর্মজীবনে সহকারী প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন ডিভিশনে দীর্ঘ সময়ে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ থাকলেও তা আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের আস্থাভাজন হিসেবে টেন্ডার, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের সকল কাজই নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম ছিলেন জড়িত। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার খরচের জায়গা না থাকার পরও অনেকটা রহস্যজনকভাবে এই প্রকৌশলীকে ২১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে এর আগে বেশ সমালোচনা দেখা দিয়েছিল অধিদপ্তরে।
জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ২০০৫ সালে বিএসসি সিভিল শেষ করেন। বিসিএস পাবলিক সার্ভিস ক্যাডার ২৭ ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে সহকারী প্রকৌশলী ২০১০ সাল থেকে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শিক্ষানবিশকালের ঐ সময়টুকু তিনি ঢাকার বাইরে চাকরি করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পদোন্নতি পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা -১ এ যোগদানের পর ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত একই পদে ছিলেন। তারও আগে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে দুই দফায় দুই উপবিভাগে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। মাঝে ঢাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের কর্মরত ছিলেন।
প্রভাবশালী ও আস্থাভাজন নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলামকে টেন্ডার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হিসেবে দাবি করেন ঠিকাদাররা। সূত্রমতে, ঘুপচি টেন্ডার থেকে ‘বিশেষ ক্লোলাজ’ তার বিশেষত্ব, তাই বাইরে থেকে খালি চোখে এসব সূক্ষ্ম দুর্নীতি তেমন চোখে পড়েনা।
দুর্নীতিবাজ আতিকুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে ডাটাবেজ তৈরির কাজ। সংস্থাটির সকল ডিজিটাল এক্সেস কাজে লাগিয়ে তিনি হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। বহাল তবিয়তে কি ভাবে ঢাকায় কাটালেন এবং অনিয়ম দুর্নীতির কমিশন বাণিজ্যের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলামের জানান,
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তার সকল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পুনরায় অডিট করলে অন্তত ৫০ কোটি টাকার গরমিল পাওয়া যাবে। যেহেতু তিনি প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের সিন্ডিকেট সদস্য তাই তার অপকর্ম সামনে আসেনি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে টেন্ডার বাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট হতে অধিক পরিমাণ উৎকোচ গ্রহণ করে অনুমোদিত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা হতে ৩ বছরে তিনি প্রায় ৬০ কোটি টাকার অতিরিক্ত দরপত্র আহবান করে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এ বদলী হয়ে চলে যান। এই অতিরিক্ত ৬০ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
একই সময় রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় কয়েকটি পরিত্যক্ত বাড়ি ও তিনটি ভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী (রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম। খরচ করার জায়গা না থাকলেও অর্থবছরে ১২০টি কাজের বিপরীতে রহস্যজনকভাবে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন এই প্রকৌশলী।
জানা যায়, সে সময় নিন্মমানের কাজ ও কাজ থেকে অর্থ আত্মসাৎ -এর নানা অভিযোগ জমা হয় তখনকার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রীর কাছে। দুর্নীতির জন্য কমিটি, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য একটি কমিটি করা হয়, এমন নজির আগে খুব একটা দেখাও যায়নি। শুধু মাত্র কমিশন বাণিজ্যই ছিল সে কমিটির মূল কাজ। কমিটির অনুমোদন নেওয়ার নামে মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগ থেকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এ হস্তান্তরে দুই বিভাগের মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুমোদন ফি নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।