অনলাইন ডেস্ক , আপলোডের সময় : সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫ , আজকের সময় : সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

এক দুর্বৃত্তের উত্থান ও করুণ পরিণতি

আসাদুল্লাহ খান একজন সাধারণ ফল বিক্রেতা হলেও, তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তাকে এক ভয়ংকর পরিচয়ে পরিচিত করে তুলেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা প্রকৃত ছাত্রত্ব সম্পর্কে সংগঠন কিছু জানে না, তবুও সে নিজেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। তবে ফল ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা ও সেবনে যুক্ত হয়ে সে এক ভয়ংকর অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। তার বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, ৩২৬ ধারায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান।

এত অপরাধের পরও, সে প্রকাশ্যে দৌরাত্ম্য চালিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে বরিশাল জেলা ছাত্রদল তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তবে বহিষ্কারের পরও সে তার অপরাধের পথ থেকে ফিরে আসেনি। বরং, অটো স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায় ও এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে তার অপরাধের বিস্তার ঘটায়।

এদিকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও আসাদুল্লাহ অপরাধের পথ ছেড়ে দেয়নি। বরং, বর্বরতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তার সহিংসতার শিকার হয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য মো. রাজিব ফরাজী ও মো. ইমরান হাওলাদার, যাদের সে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে।আসাদুল্লাহর লাগামহীন অপরাধের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। সমাজের প্রতিটি স্তরে তার অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, যে সমাজ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার হতে পারে না, সেখানে অপরাধ আরও গভীর শেকড় গেড়ে ফেলে।

অপরদিকে যে সহিংসতা ও অপরাধের মাধ্যমে আসাদুল্লাহ অন্যদের শিকার বানাত, অবশেষে সেই সহিংসতার ফাঁদেই সে নিজেই বন্দী হয়ে পড়ে। গত ৮ মার্চ রাতে নিয়ামতি বাজারের ভিআইপি মিষ্টির দোকানের সামনে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে আসাদুল্লাহ খানকে। নিঃসন্দেহে, এটি একটি নিন্দনীয় ও বেদনাদায়ক ঘটনা। তবে এটাও সত্য, তার দীর্ঘদিনের অপরাধপ্রবণ আচরণই তাকে এই পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মামলায় আসাদুল্লাহ ইতিপূর্বে কারান্তরীণও ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল্লাহ ব্যাপক বেপরোয়া হয়ে ওঠে।ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কথা পাত্তা না দিয়ে তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যায়। শুরু করে কিশোর গ্যাং দিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, , ইভটিজিং ও মাদক ব্যবসা। এতে বাধা দিলে ৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য মো. রাজিব ফরাজী ও মো. ইমরান হাওলাদাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তারা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল নেতা বলেন, আসাদুল্লাহ একজন ফল বিক্রেতা। ফল বিক্রেতার আগে ছিলো কবুতর বিক্রেতা। আমার কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কাছে প্রশ্ন, একজন ফল বিক্রেতা কীভাবে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি হয়? যে ছেলের নেই ন্যূনতম স্কুল, কলেজের সার্টিফিকেট। দলীয় কর্মসূচিতে মোবাইল ফোন দেখে দুই তিন লাইন বক্তৃতা দেয়। তাও অস্পষ্ট। আমাদের আদর্শের ছাত্রদলের অবস্থা যদি এমন হয়। তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আসাদুল্লার থেকে কি শিক্ষা নিবে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হবে আমাদের প্রাণের সংগঠন ছাত্রদল।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্টের পর জামিনে জেল থেকে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা কে কোথায় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অবস্থান শনাক্ত ও অপরাধে জড়িতদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান চলছে। সন্ত্রাসী সাবেক ছাত্রদল নেতা হোক আর বর্তমান নেতা হোক, যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছেন।