
মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী):
পটুয়াখালীর সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের ধারান্দী গ্রামের গ্রামীণ সড়কের সম্প্রসারণ কাজের দের কিলোমিটার রাস্তায় নিম্নমানের উপকরন দিয়ে চলছে সংস্কার কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ ও বাধার মুখেও বন্ধ হয়নি নিন্ম মানের ইট ও উপকরন দিয়ে রাস্তা তৈরি। কাজের তদারকিতে থাকা উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন সাইনবোর্ডে আমার নাম থাকলেও আমি মূলত কাজের সাথে এখন আর নাই। এক বছর আগে এখান থেকে আমাকে বদলি করে দেয় তবে কিছুদিন পূর্বে আবারো এখানে যোগদান করি। বদলির পূর্বে আমি এটার দায়িত্বে ছিলাম এরপরও কিছু জানতে চাইলে আগামীকাল আসেন সরাসরি দেখা করি।
জানা যায়, বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরন ও শক্তিশালী করন প্রকল্পে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৭২৫ মিটার সড়কের কাজ পায় মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজটির প্রাক্কলিত মূল্য ৪ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা যার চুক্তি মূল্য ৪ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা এবং শুরু থেকেই কাজটির তদারককারী কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম। সড়কের দুই পার্শে অধিকাংশ স্থানে পর্যাপ্ত গাইড ওয়াল ধরা থাকলেও বাকী রয়ে যায় কিছু জায়গা। প্যালাসেটিং পোস্ট এর মান খুবই খারাপ এবং সকল স্থানে কাজের মান একই রকম নয়। মানা হয়নি কাজের সঠিক পদ্ধতি। মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম জেলার। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিলে সুবিধা পায় পটুয়াখালী এলজিইডি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় একটি ঠিকাদারি চক্র। এ কারণে মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অসাধুচক্রের মাধ্যমে পটুয়াখালী এলজিইডি থেকে হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়। জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী পটুয়াখালী এলজিইডি থেকে চলমান ২২৩ টি কাজের মধ্যে মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সের নামে ২৬ টি কাজ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়দের অভিযোগে সাংবাদিকরা সরজমিনে গেলেও শ্রমিক ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা কালাম চৌকিদার বলেন, কাজ দুইদিন করে তিনদিন করে না। যেভাবে কাজ করে কাজ শেষ করার এক বছরের মধ্যেই সব গাতা গাতা হয়ে যাবে। দেখেন গাইডওয়াল অল্প একটু করে শেষ করে ফেলছিল পরে আমাদের ফারুক খান অন্য জায়গার কাজ বন্ধ করে দেয়ায় ওয়াল উঁচু করছে। ওপাশে রাস্তার দুই সাইডে কিছু দুই নাম্বারি ইট ছিল তার সঙ্গে আরও কিছু ইট আইনা মিলিয়ে দিছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সড়কের পূর্বের ব্যবহৃত পচা ইটের সঙ্গে অত্যন্ত নিম্নমান ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করে রাস্তায় বিছানো হয়েছে। দৃশ্যমান গাইড ওয়ালের কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণে তৈরি প্যারাসিডিং পোস্ট এর কোন সূচালো মাথা নেই। মাটি কেটে গর্ত করে প্যারাসিডিং পোস্ট বসানো হয়েছে যা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গাইড ওয়াল ধসে পড়বে। কার্যাদেশের পর দ্রুত গতিতে বেশ কয়েক মাস কাজ চললেও স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থেকে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও রমজানের মধ্যে ধীরগতিতে কাজ চলমান ছিল। তবে বর্তমানে পুনরায় কাজটি বন্ধ রয়েছে এ কারণে দুর্ভোগে আছে স্থানীয় জনগণ। যানবাহন চলাচলের কারণে পচা খোয়ার ধুলায় রাস্তার দুপাশে বসতবাড়ি সহ গাছপালা লাল হয়ে গেছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কালাম মিরা বলেন, এখান থেকে এক কিলোমিটার যা দেখা যায় সবই তো খারাপ ইটের খোয়া। কাজ দেখি চলে কিন্তু সরকারি লোক তো দেখি না।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হোসেন আলী মির বলেন, স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত কোন কাজ হয়ে থাকলে সেগুলো আমরা রিজেক্ট করবো। ওসব কাজ আমরা নিব না। যেহেতু আমি জানতে পেরেছি তাই আগামী সপ্তাহে সাইট ভিজিট করে ব্যবস্থা নেব। আমাদের কোন কর্মকর্তা যদি অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।