
বরগুনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোনালিসা জেরিন (২৭) নামে এক নারী উদ্যোক্তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর দিনটিই ছিল তার ২৭তম জন্মদিন, আর জানাজা ও দাফনের দিনটি ছিল তার বিবাহবার্ষিকী। এই করুণ মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারসহ গোটা বরগুনাবাসী।
শুক্রবার (৬ জুন) রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। শনিবার (৭ জুন) সকালে বিবাহবার্ষিকীতে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
জেরিন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত জাফরুল হাসান ফরহাদের ছোট মেয়ে। পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন নিজের পরিচয়— ‘জেরিন ক্রেকার্স’ নামে কেক তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বরগুনার উদ্যোক্তা মহলে হয়ে উঠেছিলেন এক অনুপ্রেরণার নাম। পাশাপাশি তিনি ছিলেন এক সন্তানের মমতাময়ী মা।
স্বজনরা জানায়, জেরিনকে ডেঙ্গু আক্রান্ত অবস্থায় ৪ জুন ভর্তি করা হয় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। ভর্তি হওয়ার সময় প্লাটিলেট ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার। কিন্তু একদিন পরই তা নেমে আসে ৪৪ হাজারে। আশঙ্কাজনক হলেও আশাবাদী ছিল পরিবার। শুক্রবার জন্মদিনে সামান্য সুস্থবোধ করায় জেরিন ফিরে যান বাসায়।
সন্ধ্যায় হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সাথে সাথে আবারও হাসপাতালে নেয়া হয় জেরিনকে। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রাত পৌনে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শনিবার সকাল। দিনটি ছিল জেরিনের বিবাহবার্ষিকী। তবে শুভক্ষণে সাজানো ঘর নয়, অপেক্ষা করছিল কবরস্থান। সকালেই জানাজা শেষে তাকে কবরস্থানে চিরদিনের জন্য রেখে আসা হয়। পরিবারের কাছে দিনটি হয়ে রইলো ভালোবাসা আর বিদায়ের এক অনাকাঙ্ক্ষিত মিলনবিন্দু।
বন্ধু-স্বজনরা জানায়, জেরিন শুধু একজন উদ্যোক্তা ছিলেন না, ছিলেন এক সংগ্রামী নারী। নিজের পরিচয় গড়েছেন স্বপ্নের কেকের ভেতরে। যিনি প্রতিটি বেকিংয়ের ভেতর ছড়িয়ে দিয়েছেন মায়া, স্বাদ ও ভালোবাসা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকী বলেন, ‘শুক্রবার সকালে তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। এবং তার জন্মদিন থাকায় বাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় আবারও দ্রুতই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর এক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।’