
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বেশিষ্ট্যগত ভাবে ছয় ঋতুতে ছয় ধরণের দৃশ্য বা আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয় আমাদের দেশে। ঋতুর হিসেবে বর্তমান বর্ষাকাল। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস হলো বষাকাল। বাংলা পঞ্জিকা মোতাবেক বর্তমান মাসকে শ্রাবণ মাস বলা হয়। বর্ষাকাল মানে হচ্ছে আকাশে সামান্য মেঘ ভাসলেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি। খাল বিল, পুকুর, নদী ও নালায় থৈ থৈ পানি। বিলের দিকে তাকালেই শুধু পানি আর পানি। কিন্তু সেই ছয় ঋতু এখনো বিদ্যমান থাকলেও বর্ষকাল বা বর্ষ মৌসুমে খাল বিল, পুকুর, নদী ও নালাতে নেই পানি। বর্ষাকাল কী আগের মতো আছে? না কি তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করেছে। এমন প্রশ্ন ছুড়েছে কৃষক মঈনুল ইসলাম। জটিল এই সমিকরণের প্রশ্নটির উত্তর যাই হউক না কেন? পাশে দাঁড়ানো আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম উত্তর দিলেন, এবার তো শ্যালোর পানি ছাড়া ধান বাঁচবে না। হামার কপালোত যে কী আছে আল্লাহ জানে। বৃষ্টি নেই, আছে শুধু রোদ, ঘাম আর বাড়তি খরচের বোঝা। বর্ষাকাল চলছে আষাঢ় পেরিয়ে এখন শ্রাবণ মাস অথচ মাঠে এখনো জমেনি বৃষ্টির পানি। জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, চারা শুকিয়ে যাচ্ছে, কৃষকের কপালও যেন তেমনি চৌচির। শ্যালো পা¤েপ পানি তুলে আমন রোপণ ও ধানের চারা বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে রংপুর অঞ্চলের কৃষক। রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টরে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমনের চারা রোপণ শুরু হয়। চলবে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে কৃষকেরা বলেন, আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কিন্তু ভরা বর্ষাকাল আমন মৌসুমে এবার বৃষ্টি দেখা নেই। প্রতি হেক্টরে সেচ দিয়ে শুধু চারা রোপণে দুই হাজারের বেশি টাকা খরচ পড়ছে। এ পর্যন্ত লাগানো আমন ধান রোপণে বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। সেই হিসাবে মৌসুমে বৃষ্টি না হলে প্রায় ১২৪ কোটি ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা শুধু রোপণে সেচ বাবদ খরচ হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি না হলেও ডিজেল চালিত শ্যালো ও সেচ পা¤প দিয়ে আমন রোপণের ধুম লেগে গেছে। কেউ চারা রোপণে ব্যস্ত, কারও রোপণ করা চারা পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। তারাগঞ্জের হাজীপাড়ার কৃষক কেচু মিয়া বলেন, আলুত সউগ লস, দাম নাই, নেওছে না। বোরো ধান আর্ধেক পোকা খাইছে। আগোত আমন চাষে তেমন খরচ লাগে নাই। এবার বৃষ্টির কোনো ঠিক নাই। খুব রোদ, মাটি ফাটি যাওছে। শ্যালো নাগে আমন চাষ করার নাগেছে। হামার কপালোত যে কী আছে, তাক আল্লাহ ভালো জানে। নারী বর্গাচাষি ফকিরপাড়া গ্রামের রাহেনা বেগম বলেন, এবার যে অবস্থা, তাতে মনে হয়, ফসল উঠবার আগেই ঋণ হয়া যাইবে। পানি দিতে দিতে জমিত মাটি নরম হইতাছে ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টি না হইলে ফলন তো কমবে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, বর্ষাকাল হলেও বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে জমিতে আমান ধানের চারা লাগানো হচ্ছে। সময়মত ধানের চারা লাগাতে না পারলে আমন ধানের ফলন ভাল হবে না। খরচ বেশি হলেও সেচ দিয়ে আমন ধান ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মটুকপুর এলাকার কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, কয়েক দিন আগে সামান্য বৃষ্টি হলেও বর্তমানে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে জমিতে পানি নাই।এখনো জমিতে আমন ধানের চারা রোপণকরতে পারি নাই। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, জমিতে পানি নেই। আকাশের অপেক্ষায় আরথাকা যায় না। শ্যালো মেশিন লাগানো লাগবে। চারার বয়সও দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আশার বাণী শুনিছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন, ২৮ জুলাই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কৃষকেরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা জানেন, এ সময় বৃষ্টি হয়। হয়তো বৃষ্টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হবে। কিন্তু তা অনিশ্চিত ব্যাপার। বাড়তি খরচ হলেও চারার বয়স ঠিক থাকা এবং ফলন ভালো হওয়ার জন্য সেচ মেশিনগুলো চালু করে যথাসময়ে চারা রোপণের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।