
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলা ভুক্তভোগী পরিবার মানবিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় মালামালের একটি অংশ উদ্ধার ও অভিযুক্তকে আটক করা সম্ভব হলেও, ভুক্তভোগী পরিবার শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পরিবর্তে সংশোধনের সুযোগ দিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৪ জুলাই ভোররাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী আফিফা আক্তার ও তার মা শ্যামলী খানমের বালিশের পাশ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, ৬০ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি হয়। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে,এবং বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চোর শনাক্ত করা সম্ভব হয়।পরে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া মেলে স্থানীয় জনগন প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২৭ জুলাই চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পোলেরহাট এলাকার বর্শিবাওয়া বাজার সংলগ্ন ভ্যানচালক মো. মালেকের ছোট ছেলে মো. সজিবকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই সজিব চুরির দায় স্বীকার করে এবং চুরি হওয়া মালামালের মধ্যে দুটি মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করে দেয়। তবে চুরি হওয়া টাকার পুরোটাই এখনো উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
জানা গেছে, অভিযুক্ত সজিব একটি অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা পেশায় একজন ভ্যানচালক। এই পারিবারিক বাস্তবতা বিবেচনায় অনেকেই ঘটনাটিকে ‘দারিদ্র্যের করুণ পরিণতি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
এসব বিবেচনায় ভুক্তভোগী পরিবার মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মোরেলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মতলুবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “স্থানীয়দের সহায়তায় মালামাল আংশিক উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মামলার বাদী নিজেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।”
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা চায় অভিযুক্ত যুবক সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হোক এবং ভবিষ্যতে এমন অপরাধ থেকে বিরত থাকুক। শাস্তির পরিবর্তে সংশোধনের সুযোগ দিতেই তারা মামলা প্রত্যাহার করেছেন।
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় মহলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ মানবিক সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করছেন, আবার কেউ শঙ্কা প্রকাশ করছেন যে এতে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে ভবিষ্যতে অপরাধপ্রবণতা বাড়তে পারে।
তবে একাধিক মহলের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো,সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগে দ্রুত অপরাধ শনাক্ত ও দমন সম্ভব। একইসঙ্গে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, সরকারি হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার এখনই কি উপযুক্ত সময় নয়?