নিজস্ব প্রতিবেদক: , আপলোডের সময় : বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫ , আজকের সময় : শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫

৩০ জুলাই ফ্যাসিবাদকে লাল কার্ড দেখানোর ঐতিহাসিক দিন

৩০ জুলাই ২০২৪, প্রতিবাদ যেদিন রঙ ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো দেশজুড়ে। প্রোফাইলের ছবি বদলে লাল রঙে সেদিন চুপ থাকাকে বয়কট করেছিল মানুষ। শোকের কালোর বিপরীতে ফেসবুকের স্ক্রিনজুড়ে সেদিন লাল শুধু বিপ্লবই ছিল না, ছিল সত্য বলার ভয়ডরহীন ভাষা। রাজপথে এক দফা এক দাবির অক্সিজেনও ছিল এই লাল।

সেদিন কোন স্লোগান ছাড়াই একটা রঙ হয়ে উঠেছিল সরব বিদ্রোহ। স্বৈরতন্ত্রের কালোর বিপরীতে গণ-অভ্যুত্থানের লাল। ভয় আর চুপচাপ থাকা দুটোকেই মানুষ সেদিন মুছে দিয়েছিল আঙুলের স্পর্শে।

যদিও রক্ত ছিলনা কারো হাতে, কিন্তু বারুদসম প্রতিবাদে মানুষের বুকে ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ সেদিন হয়ে উঠেছিলো আগ্নেয়গিরীর অগ্ন্যুৎপাত। লাল লাভায় ভেসে গিয়েছিল নীল মুখবন্ধের বৃত্তাকার পৃথিবী। যেটা শুনেছিল পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র।

একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম সেদিন হয়ে উঠেছিল ক্ষমতার রক্তচক্ষুর বিপরীতে বলতে না পারার জ্বালাময়ী মাইক, আর একটি রঙ বাক-স্বাধীনতার আগ্নেয়াস্ত্র। অনলাইনের যে ক্ষোভের উদগিরণ, সেদিন অফলাইনকে দিয়েছিলো গণজোয়ারের শক্তি আর সিস্টেমকে হুঁশিয়ারি হুংকার।

আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, জাতীয় পতাকায় সবুজের মধ্যে সূর্যের রঙটা লাল, রক্তের রঙ লাল, বিপ্লবের রঙ লাল, শহিদ আবু সাঈদ থেকে শুরু করে ফারহান, ফাইয়াজ, মুগ্ধ, রিয়া পর্যন্ত তারা প্রত্যেকে নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিলেন সেই রক্তেরও তো প্রতীক এই লাল। এবং এ সবকিছুই মিলেই আমাদের স্বাধীনতা, প্রতিবাদ, দ্রোহ, বিপ্লব সবকিছুই এই লালে এসে মিলেছিল। যখন পুরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে লালে লাল সয়লাব হয়ে গেল, তখন আমরা দেখেছি ২ জুলাই দ্রোহযাত্রা, ৩ জুলাই সেই ঐতিহাসিক সমাবেশ যেখান থেকে ১ দফার ঘোষণা আসলো।

এক বছর পর অনেকেরই প্রশ্ন সেদিন ফ্রেম বদলেছিল, বদলেছিলাম আমরাও, কিন্তু এখন? প্রোফাইল ছবিতো বদলায়, সঙ্গে সিস্টেমও কি? কেননা লাল হওয়া মানে শুধু যে একটা রঙ নয়, একটা সময়ের দায়ও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আমরা আশা করেছিলাম সকলের মধ্যে সহমর্মিতার পরিবেশটা আরও ঘনীভূত হবে, আমার মনে হয়েছে সেটা অনেক বিঘ্নিত হয়েছে। একটা ভালো দিক হচ্ছে মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। যে জনগণ অভ্যুত্থান করেছে সে জনগণ কিন্তু আবার তার নিজের এজেন্সিটাকে কোনো না কোনোভাবে (ওউন) দাবি করে। সেটা পরবর্তী সরকারের স্বৈরাচার হওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের এ ক্ষমতায়নটা অনেক বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

প্রোফাইলের রঙ বদলানো সহজ, কিন্তু রাজপথের রক্ত? এই প্রতিবেদন সেই রঙের, স্মৃতির, রক্তের এবং প্রশ্নের আদতে একটি গণ-অভ্যুত্থানের। যেখানে সাধারণের খুব সাধারণ অভিব্যক্তি এক বছর পর, আপনি কতটা লাল?