
সিলেটের উপজেলা পর্যায়ের উচ্চশিক্ষার অন্যতম বাতিঘর বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ। এ কলেজে দীর্ঘ ২৬ বছর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে শিক্ষাঙ্গনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেখানে ক্যাম্পাসের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নাট্যকলাসহ সব সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছাত্র সংসদ করে থাকে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তারা মনে করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ও তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ সম্পর্কে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখানে ১৯৯৯ইং সালে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের পৃথক প্যানেল অংশ নেয়।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু হওয়ায় এতদঞ্চলের মধ্যে বেশ খ্যাতি রয়েছে। তৎকালীন জমিদার প্রমথ নাথ দাসের দান করা ৫ একর ভূমির ওপর ১৯৬৮ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয়। সিলেট জেলার উত্তর-পূর্ব সাতটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী এই কলেজে পড়াশোনা করে। নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি কিংবা সেশন ফি’ আদায়ের সময় ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত ফি’ গ্রহণ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, এক সময় কলেজটিতে নিয়মিত বিরতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার মাধ্যম পাচ্ছেন না। এছাড়াও দীর্ঘদিন ছাত্র নেতৃত্ব না থাকার কারণে নানামুখী সংকট তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম যাতায়াতের গাড়ির সমস্যা, ছাত্রছাত্রীদের আবাসন সংকট, কলেজে বহিরাগতদের আনাগোনাসহ বিভিন্ন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। কলেজের খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, ভ্রমণ অনুষ্ঠান, জাতীয় অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনসহ কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমদ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী তোফায়েল হোসেন তোহা বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নির্বাচন হলে বিয়ানীবাজারেও হবে বলে আমরা আশা করি। এতে নতুন নেতৃত্ব তৈরী হবে।
কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী নাসরিন সুলতানা বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যে প্রতিনিধি উঠে আসে তারা কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে না; বরং তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে। তাই শিক্ষার্থীদের সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিরও মীমাংসা করতে অবিলম্বে বিএল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ছাব্বির আহমদ বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা পেলে অবশ্য আমরাও নির্বাচনের আয়োজন করব।