
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বিশ্বের কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার হোটেল স্যুটে বিশ্বনেতারা প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। নেতারা উল্লেখ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও ১৬ বছরের অপশাসন, দুর্নীতি ও শোষণের পর দেশটি এখনও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে।
বক্তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তার আজীবন অবদানের উচ্চ প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আমরা এখানে এসেছি আপনাকে ও বাংলাদেশের মানুষকে সমর্থন দিতে। আমরা পুরোপুরি আপনার পাশে আছি। অনেক নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশেষজ্ঞ সহায়তার আশ্বাস দেন। উপস্থিত এক নেতা বলেন, আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। অনেক কাজ বাকি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর স্টেট ট্রেজারার কেরি কেনেডি বাংলাদেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে আপনাদের অগ্রগতি অসাধারণ।
জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেল্যান ভারভির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, আপনাদের যখনই প্রয়োজন আমরা আছি।
বিপুল সমর্থন পেয়ে উপস্থিত নেতাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে আমাদের প্রতি সমর্থন দিতে দেখে আমি মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত।
ড. ইউনূস তার প্রশাসনের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশ ১৫ বছরব্যাপী একটা ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯। জনগণ রাতারাতি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে, অথচ সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে সহায়তার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আপনাদের পরামর্শ, সমর্থন ও নৈতিক শক্তি প্রয়োজন।
লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবার্গার নেতৃত্বে এই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ভিকে-ফ্রেইবার্গা নিজামী গাঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতিও, যা ১১ শতকের বিখ্যাত পারস্য কবির নামে প্রতিষ্ঠিত।
এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরুত পাহর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিয়েভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমলাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার সাবেক সভাপতি, কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসির সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আইএইএ এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা।