মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫ , আজকের সময় : মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

বরুন বাড়ীয়া ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী ৮৬নং বরুন বাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের উদ্যোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে বরুন বাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শতাধিক নারী-পুরুষ ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় শত বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ হয়ে আসছে। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তানি আমল ও স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জাতীয় ও স্থানীয় সব ধরনের নির্বাচনে এই কেন্দ্রেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন।

এর আগে গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষে নাসির উদ্দিন লিটন মিয়া জেলা প্রশাসক বরাবর ভোট কেন্দ্রটি স্থানান্তর না করার জন্য আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করেন ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া ভোট কেন্দ্রটিতে আজ পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার রেকর্ড নেই। বর্তমানে আব্দুল কাদের খান নামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তার ব্যক্তি স্বার্থে কেন্দ্রটিকে তার বাড়ির সামনের বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করার চেষ্টা করছে। যেটির অবস্থান পার্শ্ববর্তী মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের ১০০ গজের মধ্যে।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, একটি কুচক্রী মহল দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী এই ভোটকেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। অতীতেও তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এবারও আমরা তা হতে দেব না।

বক্তারা আরও বলেন, বরুন বাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রটি ২নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে পাকা বহুতল ভবন, প্রশস্ত আঙিনা ও প্রধান সড়কের সংযোগ থাকায় নারী, বৃদ্ধ ও সাধারণ ভোটারদের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ লিটন মিয়া, জামাল মোল্লা, হেলাল উদ্দিন, ফোরকান মোল্লা, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক আবুল খায়ের, শ্রী মতি লাল, সাবেক ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম, তাসলিমা বেগম, পদ্মা রানী প্রমুখ।

প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, কয়েকশ নারী-পুরুষ ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর না করার দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা বলেন, যদি কেন্দ্রটি অন্যত্র সরানো হয়, আমরা জেলা শহরে গিয়ে বিক্ষোভসহ ডিসি অফিস ও নির্বাচন অফিস ঘেরাও করব।

এ বিষয়ে মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান টিটু বলেন, বরুনবাড়ীয়া ভোটকেন্দ্রটি একটি ইউনিয়নের ঐতিহ্য। এটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বলে দেখেছি। এরপরও সরকার ও প্রশাসন বিবেচনা করে যেখানে ভালো মনে করেন সেখানেই ভোটকেন্দ্রটি হবে।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ওহিদুজ্জামান বলেন, পটুয়াখালী জেলায় ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য ১৫ টি আবেদন পড়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। মানববন্ধন কিংবা যে কোন ধরনের দাবি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব সেটি নির্বাচন কমিশন থেকে বর্ণিত নীতিমালা অনুযায়ী হবে। নীতিমালা অনুযায়ী কেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলেন, শতবর্ষী এই ভোটকেন্দ্রটি শুধু একটি বিদ্যালয় নয়, এটি এলাকার ঐতিহ্যের প্রতীক। হঠাৎ করে এটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থানীয়দের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

মানববন্ধন শেষে উপস্থিত নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণীরা সমবেত হয়ে ১নং ও ২নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এতে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।