পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে সরকারি ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় দালাল চক্র এবং ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সুবিধাভোগী নারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ । প্রকৃত উপকার ভোগীদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত এই কর্মসূচির লক্ষ্য দরিদ্র ও অসহায় নারীদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা। প্রতি কার্ডে মাসিক ৩০ কেজি খাদ্যশস্য এবং বাধ্যতামূলক ২৫–৫০ টাকা সঞ্চয় দেওয়া হয়, তার পরিবর্তে অতিরিক্ত নেওয়া হয় ২০০শত টাকা যা প্রকল্প শেষ হলে ফেরত দেওয়া হয়।এ টাকা ফেরত না পাওয়ার দুঃখ প্রকাশ করলেন অসহায় নারীরা।
ধুলাসার ইউনিয়নে অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পে ৩০০ জনের নাম রয়েছে। অথচ অনলাইন করা হয়েছে ৯০০ শত নারী সদস্যের প্রত্যেকের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রতি নারী থেকে ২০০০–৪০০০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এবং তাদের কাছ অনলাইনখরচ বাবদ ২ থেকে ৫০০শত টাকা নেওয়া হয়েছে । প্রথমত তাদের কাছ থেকে ২০০০ হাজার টাকা নিয়েছেন, তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি, কিন্তু ৩০০০ হাজার টাকার বেশি দিয়েছেন তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কার্ড বিতরণের সময় অতিরিক্ত ১০০০ হাজার টাকা এবং পরিবহন বাবদ জনপ্রতি ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় দালাল চক্র এবং চেয়ারম্যানের নিকটস্থ লোকদের মাধ্যমে তালিকা প্রভাবিত করা হয়েছে।
২৬ অক্টোবর বিকেলে সরেজমিনে ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, শতাধিক নারী ও পুরুষ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে এসেছেন। সুবিধাভোগীরা জানান, তারা টাকা দিলেও প্রকৃতভাবে কার্ড পাননি। অনিয়ম স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।আমাদের চেয়ে যারা বেশি টাকা দিয়েছে। তারা কাড পেয়েছে।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা টাকা দিয়েছেন। মোঃ সবুজ ২০০০ হাজার টাকা, আব্বাস ১৫০০ হাজার টাকা, আখিনুর ২০০০ হাজার টাকা। ১ নং ওয়ার্ডের মোঃ মহিবুল্লাহ হাওলাদার দিয়েছেন ৪০০০ হাজার টাকা।
৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাহিনুর বলেন, প্রথমে দুই মাস আগে ২০০০ হাজার টাকা নিয়েছে, এখন নাম উঠাতে আরও এক হাজার টাকা চায়। অনলাইন করার জন্যই টাকা নিচ্ছে। বশির বিশ্বাস,লাল মিয়া, সাবেক চৌকিদার বধি,আল-আমিন সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের অনেক মাধ্যমে চেয়ারম্যান টাকা সংগ্রহ করেছেন।
২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ তরিকুল বলেন, আমার ভাই মফিজুলের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের লোক ২০০০ টাকা নিয়েছে আমার সামনে থেকে। এগুলো চেয়ারম্যান তাদের মাধ্যমে নিয়েছে।
চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম সত্যতা স্বীকার করে বলেন,টন প্রতি পরিবহন খরচ দেওয়া হয় ১০০০হাজার টাকা কিন্তু সরকারি বরাদ্দ মাত্র ২৫০ টাকা। এগুলো ছয় মাস পরে পাই। সাবেক ইউএনও জাহাঙ্গীর স্যার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা যদি খরচ দেয় তাহলে নিয়ে নেবেন ওগুলো দিয়ে পুষিয়ে দিবেন। যারা গ্রাহক তারাও বলেছেন, প্রয়োজনে কেরিং খরচ টাকা নেন কিন্তু চাল কম দেবেন না। তাই ৩০ কেজির চালে ৫০ টাকা হিসাব অনুযায়ী ২০০ টাকা খরচ নেই।অতিরিক্ত উৎকোষ তিন থেকে চার হাজার টাকার ব্যাপারে তিনি বলেন আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আর যারা নিয়েছে তাদেরকে আমি চিনি না। এব্যাপারে আমি দোষী নই।
ট্যাক অফিসার মো: রিয়াজুল ইসলাম বিআরডিপি কর্মকর্তা বলেন, মহিলা অধিদপ্তর থেকে যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে মাস্টার রোল, আইডি কার্ড দেখে সশরীরে উপস্থিত হয়ে যাদেরকে পাওয়া যায় তাদের দেখে আমি চাল বিতরণ করি। চাল কম দেয় তাহলে সেটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর টাকা-পয়সা নেয়ার ব্যাপারে যেগুলো শুনতেছি। এ ব্যাপারে আমি দেখি নাই। আর শুনিনাই এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
উপজেলা মহিলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, এ ব্যপারে আমি আগে চেয়ারম্যনের ব্যপারে স্যরকে বলি, আগে কোন লেখালেখি করিয়েন না। আমি এ ব্যপারে কোন কেলেঙ্কারির চাই না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওসার হামিদ বলেন, নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ দিলে সে ব্যাপারে আমি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেব। কেরিং খরচের ব্যপারে চেয়ারম্যনের সাথে কথা বলে দেখছি।
ধুলাসার ইউনিয়নে কার্ড বিতরণ প্রক্রিয়ায় এই ধরনের অনিয়ম প্রকৃত সুবিধাভোগী নারীদের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ প্রশাসনিক তদারকি এবং তদন্তের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে।