মনজুর মোরশেদ তুহিন (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ , আজকের সময় : বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সওজ কর্মচারীদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে দেশব্যাপী আন্দোলন: পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পটুয়াখালী জেলা সওজ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করেন সওজ কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, সওজ কর্মচারী ইউনিয়ন ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ নাজমুল হুদা। এতে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ এনামুল হক, সিনিয়র সহ-সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক খবির উদ্দিন হাওলাদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলমসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি তারা ভবন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ র‌্যালি বের করেন, যা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ‘কাজ নাই, মজুরি নাই’ নীতিতে কর্মরত হাজারো শ্রমিক অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। অথচ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়মিত বেতন প্রদানের প্রক্রিয়া এখনো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ‘দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরে জরুরি কাজের প্রয়োজনে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে, তবে নিয়মিত পদে নয়। এছাড়া নারী-পুরুষের মজুরিতে বৈষম্যহীনতা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও নিয়োগের স্বচ্ছ রেকর্ড সংরক্ষণের নির্দেশনাও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় অর্থ বিভাগের বাজেট-২ অনুবিভাগ থেকে ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ২,০০৩ জন শ্রমিককে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত উক্ত নীতিমালার আওতায় নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়োগ যেন কোনো নিয়মিত শূন্যপদে না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ সফিউল আলম স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়, যা সওজ কর্মচারীদের আন্দোলনের অন্যতম প্রেক্ষাপট হিসেবে ভূমিকা রাখে।

কর্মচারীদের যৌক্তিক পাঁচটি দাবিগুলো হচ্ছে, দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫’-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন। দীর্ঘদিন কর্মরত দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ। কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে মাসিক ভিত্তিতে বেতন প্রদান। নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও নারী-বান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। অভিন্ন মজুরি কাঠামো প্রণয়ন ও বৈষম্য রোধ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সওজ কর্মচারীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সহযাত্রী। অথচ তারা বছরের পর বছর অনিশ্চিত অবস্থায় কাজ করছেন। সরকারের ঘোষিত নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে দেশব্যাপী আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে।”
তারা আরও বলেন, “আমরা সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন দেখতে চাই, যাতে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও জীবিকা সুরক্ষিত থাকে।”

‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’—এই স্লোগানে মুখরিত পটুয়াখালী সওজ ভবন প্রাঙ্গণে দুই ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি শেষে কর্মচারীরা প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করেন।