আমতলী (বরগুনা) প্রতিবেদক: , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ , আজকের সময় : বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫

বরগুনা-১ আসনের মনোনয়নে ক্ষুব্দ আমতলী-তালতলী প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা

আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (বরগুনা সদর- আমতলী- তালতলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষুব্দ আমতলী-তালতলীবাসী। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় আমতলী-তালতলী উপজেলা থেকে সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রায়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বরগুনা-১ আসন থেকে প্রার্থী পরিবর্তন করে আমতলী-তালতলী থেকে মনোনয়ন দেয়ার দাবী জানান প্রান্তিক জনগোষ্ঠি।

জানাগেছে,স্বাধীনতার পর থেকে সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন আওয়ামীলীগের দুর্গ হলেও ২০০১ সালে সেই দুর্গে হারা দেয় সাবেক সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা মতিউর রহমান তালুকদার। ওই সময় এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে মতিয়ার রহমান তালুকদার প্রতিদ্বন্ধিতা করে মাত্র ৫ হাজার ভোটে হেরে যান। শেখ হাসিনা এ আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে মতিয়ার রহমান তালুকদার বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময়ে আমতলী-তালতলী উপজেলায় উন্নয়নে আমুল পরিবর্তন হয়। ২০০৮ সালে সেনাশাসিত সরকার বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে বিলুপ্তি করে দুইটি আসনে রুপান্তিত করে। বরগুনা সাবেক- ৩ আসন (আমতলী-তালতলী) বিলুপ্তি হয়ে বরগুনা সদরের সঙ্গে একিভুত হয়।

আমতলী-তালতলী উপজেলার ৪ লাখ মানুষের ভাগ্য নেমে আসে অন্ধকার। ২০০৯ সাল থেকে আসন থেকে ধীরেন্দ্র দেবনাশ শম্ভু তিন তিন বার সাংসদ হলেও আমতলী-তালতলীর কোন উন্নয়ন ঘটেনি। সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদারের রেখে যাওয়া উন্নয়নই তিনি (শম্ভু) ওলট পালট করে উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। গত ১৬ বছর নানাভাবে উন্নয়ন বিমুখ হয় আমতলী-তালতলী উপজেলার মানুষ।

বরগুনা-১ আসনের তিনটি উপজেলা সাড়ে চার কিলোমিটার প্রস্থ ও ৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পায়রা নদী বিছিন্ন করে রেখেছে। পায়রা নদীর পুর্ব পাড়ে আমতলী-তালতলী উপজেলা। পশ্চিম পাড়ে বরগুনা সদর উপজেলা। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮’শ ৭৪। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪’শ ৮ ও তালতলী উপজেলার ভোটার সংখ্যা ৯৩ হাজার ৭’শ ২৫ জন। এ দুই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ১’শ ৩৩। বরগুনা সদর উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭’শ ৪১ জন। বরগুনা সদর উপজেলার চেয়ে পায়রা নদীর পুর্বপাড়ের আমতলী-তালতলী উপজেলার ২৬ হাজার ৩’শ ৯২ ভোটার বেশী। এ তিনটি উপজেলার মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের দুর্গ। তালতলী উপজেলা বিএনপির দুর্গ। আমতলী উপজেলায় আওয়ামীলীগ,বিএনপি ভোট বেশী কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলেরও ভোট আছে। তবে আমতলী-তালতলী উপজেলায় জামায়াতের ভোট কম।

আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমতলী-তালতলী উপজেলা থেকে সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম গাজী, বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রায়াত অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন এবং বরগুনা সদর থেকে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম মোল্লা, কেন্দ্রিয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ-উজ জামান মামুন মোল্লা ও মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা বিএনপির চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে সাক্ষাতকারের জন্য মনোনয়ন বোর্ডের আমন্ত্রণ পান। এতে আমতলী-তালতলীবাসী আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু দুই উপজেলার দুই লাখ ৯২ হাজার ১’শ ৩৩ ভোটারকে বঞ্চিত করে সোমবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে জেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লাকে মনোনয়ন দেয়। আমতলী-তালতলী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় দুই উপজেলা মানুষ ক্ষুব্ধ হন এবং সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার ও ওমর আব্দুল্লাহ শহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।

অপর দিকে বরগুনা সদর থেকে বিএনপি. জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় আমতলী-তালতলী উপজেলা প্রার্থী শুন্য থাকায় ফাঁকা মাঠে বিদ্রোহী প্রার্থী সুযোগ লুফে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে এ আসন বিএনপির উদ্ধার করা কঠিন হবে বলে জানান সাধারণ ভোটাররা।

ভোটার জিয়া উদ্দিন জুয়েল, আব্দুস সাত্তার ও আব্দুল হক মৃধা বলেন, আমতলী-তালতলীর ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ ভোটারের মতামত উপেক্ষা করে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুব্দ প্রান্তিক জনগণ। গত ১৭ বছর দুই উপজেলার মানুষ বঞ্চিত ছিল। আমরা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আমতলী-তালতলীর মানুষকে বঞ্চিত করবেন না। কিন্তু বিএনপিও আমাদের বঞ্চিত করলো। বিএনপি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে বরগুনা-১ আসনের দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করে উনন্নয়ন বঞ্চিত আমতলী-তালতলী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন নেয়ার দাবী জানান তারা।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রায়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, আমতলী-তালতলীর দুই লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ ভোটার সাথে নিয়ে তাদের দাবী পুরণে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।

সাবেক সাংসদ মতিয়ার রহমান তালুকদার বলেন, জনগণকে সাথে নিয়েই আগামী নির্বাচনে লড়বো। জনগণ আমার মুল শক্তি। আমতলী-তালতলীর মাটি ও মানুষের নেতা আমি। আমারতো হারানোর কিছুই নেই। হারলে এ দুই উপজেলার জনগণকে নিয়ে হারবো।