দক্ষিণ বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী চৈতা দরবারের পীর এবং ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল খান এর পিতা আলহাজ্ব মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান ইন্তেকাল করেছেন। রবিবার রাত ১.২৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স ৮৮ বছর। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে ও মেয়ের সংসারে ১৪ জন নাতি-নাতনি ও অজস্র ভক্তবৃন্দ রেখে গেছেন।
প্রথম জানাজা ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইলে সকাল ৭ টায় এবং পটুয়াখালী জেলাধিন মির্জাগঞ্জ উপজেলার চৈতা নেছারিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা মাঠে আসর নামাজ বাদ অনুষ্ঠিত হবে।
পটুয়াখালী জেলাধীন মির্জাগঞ্জ উপজেলার চৈতা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম সাধক পীরে কামেল আলহাজ্ব মাওলানা ইউনুস (রহ) ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের উচ্চ মাকামের একজন ওলিয়ে কামেল। তিনি তার জীবনে সবটুকু সময় ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজে নিবেদিত করেছেন। তিনি ছারছীনা দরবার শরীফের অন্যতম খলিফা ছিলেন। এই বংশেরই অষ্টম পুরুষ হেশামত উদ্দিন খান ইসলামের সূতিকাগার সুদূর ইরান থেকে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন।
মাওলানা নূর মোহাম্মদ খান একটি অজপারাগায়ে জন্ম নিলেও তার প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে জাতীয় পর্যায়। নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা। নিজ বাড়ি ছাড়াও নিজ জেলা পটুয়াখালীর বিভিন্ন স্থান ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছেন এমপিওভুক্ত আলিয়া মাদ্রাসা। তিনি একদিকে একজন প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে কর্মরত অবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বোর্ড অফ গভর্নর ছিলেন।
এছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অনেক বিষয়ে হেড এক্সামিনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংগঠনিকভাবে বাংলাদেশ জমিয়তে হিজবুল্লাহরকেন্দ্রিয় নায়েবে আমির, মজলিসের সুরের স্পিকার ছিলেন। বেসরকারি শিক্ষকদের তদানীন্তন একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারেসিনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন মহাসচিব ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কাজী এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ছিলেন। আশির দশকে স্কুল কলেজ মাদরাসার সম্মিলিত শিক্ষক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পদ ছিলেন। ইবতেদায়ী মাদ্রাসার রূপকার তিনি। রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে বহু দেশে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশের সমস্যা সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। তিনি সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বিশ্বের প্রায় ২১টি দেশ সফর করেছেন।
সর্বশেষ অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসরের পর নিজ ইউনিয়ন ১ নং মাধবখালী ইউনিয়ন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি চৈতা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার স্বপ্নের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে আছেন। তারপর বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতি কথা অনেক, তার জীবনের পুরোটা সময় মানব সেবায়নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন।