শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক তথ্য চেয়ে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : আজাদ মজুমদার পার্বত্য উপদেষ্টার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ চার বিদেশি প্রতিনিধির সাক্ষাৎ নান্দাইলে যুগের হাওরে পুলিশ ডিউটি বক্সটি সংস্কার চায় এলাকাবাসী প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান চায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র তাড়াইলে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু মুরাদনগরে এসএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহে যুবকের কারাদন্ড

ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৫৭৫২ বার পঠিত

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং স্বাধীনতা-পূর্ব অভিন্ন সম্পদের জন্য বকেয়া অর্থ প্রদান সহ অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলো সমাধান করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে ‘সুদৃঢ় দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব মোঃ জসিম উদ্দিন পাকিস্তানের সফররত পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সাথে পররাষ্ট্র দপ্তরের পরামর্শ (এফওসি) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সাথে ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো উত্থাপন করেছি।’

তিনি বলেন, বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের শিকারদের জন্য প্রেরিত বৈদেশিক সাহায্য তহবিল স্থানান্তর এবং ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া।’

পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা (ঢাকা) বলেছি যে, ঐতিহাসিক অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করার এটাই সঠিক সময়।’ তিনি আরো বলেন, পারস্পরিক কল্যাণ ও স্বার্থের জন্য ‘আমাদের সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি’ তৈরির জন্য এই সমস্যাগুলো সমাধান করা প্রয়োজন।

পাকিস্তানি পক্ষের প্রতি এই আহ্বানের বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া ছিল জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘তারা ভবিষ্যতে অমীমাংসিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সম্পৃক্ত হতে চায়।’

১৫ বছরের মধ্যে এটি ছিল প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ঢাকা-ইসলামাবাদ এফওসি বৈঠক। সফররত পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেনের সাথে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত আলোচনাকালে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই শীর্ষ আমলা তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, স্বাধীনতা-পূর্ব অভিন্ন সম্পদের অংশ হিসেবে ৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাপ্ত বৈদেশিক অনুদান ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হয়েছে।

কয়েক দশক ধরে টাকার অবমূল্যায়নের প্রেক্ষিতে পরিমাণ উদ্ধৃত করার সময় তা বিবেচনা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এফওসি-তে উত্থাপিত বিষয়টি এবং পরবর্তী বিস্তারিত আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একজন প্রতিবেদক পররাষ্ট্র সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন, ঢাকা কি বর্তমানে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে, যেমনটি বলা হচ্ছিল যে, বাংলাদেশ অতীতে নয়াদিল্লির দিকে ঝুঁকে ছিল।

জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা’ এবং ‘পারস্পরিক সুবিধার’ ভিত্তিতে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। এটি কোনও নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকে থাকার বিষয় নয়।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এফওসি পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের পরিকল্পিত বাংলাদেশ সফরের জন্য ২৭ ও  ২৮ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেছে।

উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে শিগগির সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হাইকমিশনাররা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে আজ অনুষ্ঠিত ব্যাপক আলোচনা আমাদের সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে এবং পারস্পরিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্যের মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোর সমাধানে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। ঢাকা তার বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য অনুসারে সকল প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপটে, উভয় প্রতিনিধি দল আগামী দিনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।’

জসিম বলেন, ঢাকা ইসলামাবাদের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর জোর দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য বাজার প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, বাণিজ্য পদ্ধতি সহজিকরণ, শুল্ক বাধা অপসারণ এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছি।’

উভয় পক্ষ প্রযুক্তি হস্তান্তর, উন্নত জাত এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে কৃষি, মৎস্য ও পশুপালনে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করেছে।

পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেছে, উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং বন্যার প্রভাব প্রশমনের জন্য জ্ঞান ও সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।

তিনি বলেন, আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করার বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল রুট চালু করা হয়েছে। আমরা জনগণের মধ্যে জনগণের যোগাযোগ জোরদার এবং বাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা করেছি।’

তিনি জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পাকিস্তানের একটি বেসরকারি বিমান সংস্থা, ফ্লাই জিন্নাহর কার্যক্রম অনুমোদন করেছে, অন্যদিকে শিয়ালকোটে অবস্থিত আরেকটি বিমান সংস্থা – এয়ার সিয়াল – সরাসরি ফ্লাইট চালু করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, উভয় পক্ষ উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহযোগিতা সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ শিল্পী, সংগীতজ্ঞ, লেখক, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য পেশাদারদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করেছে।’

জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা সার্ক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা, সংযোগ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এ সংস্থার পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সনদের লক্ষ্য এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার দৃঢ় সংকল্পের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, উভয় দেশই গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর চলমান গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য পাকিস্তানের সহায়তাও কামনা করেছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..