জাতীয় সমবায় দিবসের রীতি অনুযায়ী প্রতিবছর নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার জাতীয় সমবায় দিবস পালিত হয়। “সমবায়ে গড়ছি দেশ-স্মার্ট হবে বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে ৫২ তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে।
সমবায় দিবস পালন উপলক্ষ্যে শনিবার (৪ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি র্যালী বের হয়ে সদর বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিন করে উপজেলা হলরুমে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। র্যালী শেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিবৃন্দ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
সমবায়ীবৃন্দের আয়োজনে উপজেলা বিআরডিবি দায়িত্বে থাকা ছাইদুর রহমান মুন্সীর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন। এছাড়াও আলোচনা সভায় প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারী, সমবায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সমবায়ীবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন।উপজেলা সমবায় অফিসার সামছুল আলমের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি জমি ও অন্যান্য সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যাপক কার্যক্রম নিয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণ, আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ ও উপকরণসহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছে।
বক্তারা এসময় আরও বলেন, মহান স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রাম সমবায়ের মাধ্যমে একটি স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কারণ, সমবায়কে তিনি (বঙ্গবন্ধু) উন্নয়নের অন্যতম প্রায়োগিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যেই তিনি গ্রামে-গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সমবায়ের আদর্শে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করে সাধারণ মানুষের স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দরিদ্র, ভূমিহীন, নিম্নবিত্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণপূর্বক তাদের সমবায়ের মাধ্যমে সুসংগঠিত করতে ১৯৭৩ সালে ‘সমবায় দুগ্ধ প্রকল্প’ নামে একটি দুগ্ধ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঁচটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকায় দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করেন। আজকের মিল্ক ভিটা তাঁরই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের ফসল। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার সমবায় সমিতি রয়েছে। এ সব সমবায় সমিতি শেয়ার ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে পুঁজিগঠন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন, বিপণন প্রভৃতি কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নসহ সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
আলোচনা সভা শেষে চারটি সমিতিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরুস্কার প্রদান করা হয়। সমিতি চারটি হল, সঞ্চয় ও ঋণদান ক্যাটাগরিতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি নির্বাচত হয়েছেন, গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড, মৎস্যজীবি ক্যাটাগরিতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি নির্বাচিত হয়েছেন, রজনীগন্ধ্যা সমবায় সমিতি লিমিটেড, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্যাটাগরীতে শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি নির্বাচিত হয়েছেন, পল্লী ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি লিমিটেড ও ২০২৩ সালের উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি নির্বাচিত হয়েছেন, শতদল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড।