গত ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন নজরুল। পরিবারের ধারণা, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। খুঁজে পেতে দেশের প্রতিটি থানায় চিঠি দিয়েছে পুলিশ। বোনেরও ডিএনএ পরীক্ষা নেওয়া হয়। আজ তার ৩ বছর ৪ মাস ১৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে কিন্ত আজও ফলাফল মেলেনি।
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে তিন বছর হয়েছে নিখোঁজ হওয়া অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার নজরুল ইসলামের খোঁজ মেলেনি। তিনি সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) মো. মাজহারুল ইসলামের ভগ্নিপতি। ওই ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী একটি অপহরণ মামলাও করেছিলেন। কিন্তু এখনো খোঁজ না মেলায় পরিবারের সদস্যরা হতাশ।
পুলিশ বলছে, খুঁজে পেতে অনেক আগেই দেশের সব থানায় নজরুল ইসলামের ছবি পাঠিয়ে চিঠি লেখা হয়। বোনের ডিএনএ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অচেনা কারও লাশ পেলে তার সঙ্গে ছবি ও ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হয়। তবে এখনো কোনো হদিস মেলেনি। দেশের প্রতিটি থানায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
রুবিনা-নজরুল দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। ছোট ছেলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ থেকে ইর্ন্টান চিকিৎসক। গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলা বেতাগী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে। নজরুল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় চাকরি করতেন। পরিবারসহ থাকতেন শনির আখড়ায়।
তৎকালীণ বেতাগী (ইওএনও)‘র মাধ্যমে ২০২৩ সালে তাঁর কার্যালয় পরিবারের পক্ষে নজরুল ইসলামের দুই বোন মঞ্জু আক্তার ও কামরুন নাহার তৎকালীণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট স্মারক লিপি প্রদান করেন। কিন্ত এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
নজরুল ইসলাম গত ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি সকালে শনির আখড়ার ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। এরপর আর তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী রুবিনা নজরুল সে বছরের ৯ জানুয়ারি উত্তরখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন (জিডি নং-৪৬৮, তারিখ: ০৯-০১-২০২২)। পরে ২৬ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন (যার নং-১৩৪,ধারা-৩৬৫/৩৪)। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘নজরুল ইসলাম ঐ বছরের ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার দিকে উত্তরখানের বাড়ির ভাড়া তোলার কথা বলে শনির আখড়ার বাসা থেকে বের হন। তিনি ওই দিন রাতে না ফেরায় তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফোন দিয়ে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর সকল আত্মীয়-স্বজনকে বিষয়টি জানানো হয়। তারাও কেউ খোঁজ দিতে পারছিল না। এরপর উত্তরখান থানায় একটি জিডি করা হয়।
কিন্তু তারপরও খোঁজ মেলেনি। নিখোঁজ নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে ধারনা করা হয়, গত বছর ৭ জানুয়ারি তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাঁকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে অজ্ঞাত কোনো স্থানে নিয়ে রাখে।’
নিখোঁজ নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, বাসা থেকে একটা মানুষ বেরিয়ে গেল, তাঁর কোনো হদিস মিলছে না। তারা কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। থানা, র্যাব, পিবিআই সবাই তদন্ত করছে। তবে তাঁর সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। নিখোঁজ নজরুলের বড় শ্যালক পুলিশের উচ্চপদস্থ (সদ্য বিদায়ী) কর্মকর্তা ছিলেন এর পরেও নজরুল নিখোঁজের কোন রহস্য উদঘাটন হয়নি।
নজরুলের ভাই কৃষিবিদ সাইদুর রহমান বলেন,‘ভাইকে হারিয়ে আমাদের সব তছনছ হয়ে গেছে। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুঁজেছি। র্যাব, পুলিশসহ সকল বাহিনীর দপ্তরে গিয়েছি, কেউ খোঁজ দিতে পারেনি।’
বোন মঞ্জু আক্তার বলেন, ‘ গোয়েন্দা পুলিশ কে সবতথ্য এবং বোন হিসাবে ডিএনএ পরীক্ষা দিয়েছি তারও ২ বছর অতিবাহিত হয়েছে এবং স্মারক লিপি দিয়ে ছিলাম। কিন্ত ভাইয়ের আজও কোন সন্ধান পাইনি। তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন।’
মঞ্জু আক্তার বলেন, আমাদের পরিবার এখন চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। মা-বাবা না থাকায় আমাদের একমাত্র অভিভাবককে হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। নিখোঁজের পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে তার সন্তানরাও বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।’
বোন কামরুন নাহার বলেন, জানিনা তিনি এখন কোথায়, কি অবস্থায় রয়েছেন এবং কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে কিংবা ইঙ্গিতে তিনি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মাধ্যমে তাঁর সন্ধান চাই।
এ দিকে বেতাগী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পালেষ্টাইন প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো: জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ব্যাংকার নজরুল ইসলাম বেতাগী ফাউন্ডেশনের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তিনি গুম হওয়ার পেছনে ফ্যাসিষ্ট সরকারের উর্ধতন এক পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। আমি নজরুলকে খুঁজে বের করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য অন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি জোড় দাবি জানাচ্ছি।
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশ। এরপর ডিবি তদন্ত শুরু করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিমের ডিবির পরিদর্শক মো: বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ নজরুল ইসলাম নিখোঁজের এখনো কোনো ক্লুপাওয়া যায়নি। তবে আমাদের প্রচেষ্টার কমতি নেই। এর রহস্য উদঘাটনে নতুন করে জোড়ালোভাবে কাজ শুরু করেছি। আশাকরি খুব দ্রæতই একটি ফলাফল পাওয়া যাবে।’