শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন

চায়ের দোকানে বসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন যুবদল সভাপতি: হয় স্বাক্ষর দেন , নইলে থানায় চলেন

আমতলী (বরগুন) প্রতিনিধি:
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
  • ৫৭৫০ বার পঠিত

হয় স্বাক্ষর দেন, নইলে থানায় চলেন এমন হুমকি দিয়ে চায়ের দোকানে বসে জোরপুর্বক আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধার কাছ থেকে চেয়াম্যানের দায়িত্ব পত্রে স্বাক্ষর নিলেন জাতীয়তাবাদী ইউনিয়ন যুবদল আহবায়ক ইউপি সদস্য ফিরোজ খাঁন (তাপস)। এমন অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা। বৃহস্পতিবার দুুপরে আমতলী উপজেলা পরিষদ সড়কের সামনে শ্যামলের চায়ের দোকানে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানাগেছে, আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা গত বছর ২১ আগস্ট দায়িত্ব পান। ওই সময় থেকে তিনি ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ১৬ জুন থেকে চেয়ারম্যান মিঠু মৃধাকে পরিষদে যেতে দেন না আমতলী সদর ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী যুবদল আহবায়ক ফিরোজ খাঁন (তাপস)। তিনি চেয়ারম্যানকে অফিস আসতে বারন করে দেন। অফিসে আসলে তাকে মারধর ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেন তিনি (তাপস)। গত তিন দিন যাবৎ তিনি চেয়ারম্যান) যুবদল আহবায়ক ইউপি সদস্য তাপস খানের ভয়ে অফিসে যেতে পারছেন না এমন অভিযোগ চেয়ারম্যান মিঠুর। বৃহস্পতিবার দুপুরে চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু আমতলী উপজেলা পরিষদ সড়কের সামনে শ্যামলের চায়ের দোকানে বসা ছিলেন। ওই সময় যুবদল আহবায়ক ইউপি সদস্য তাপন খাঁন, আরো দুই ইউপি সদস্য মাসুদ ও জসিমসহ যুবদল নেতাকর্মী নিয়ে চেয়ারম্যানকে চায়ের দোকানে আটকে রাখেন। পরে তাকে চিঠিতে স্বাক্ষর দিতে বলেন। চেয়ারম্যান স্বাক্ষর দিতে রাজি হয়নি। পরে যুবদল আহবায়ক বলেন, হয় স্বাক্ষর দেন, নইলে থানায় চলেন। পরে যুবদল আহবায়ক তাপন খানের লেখা একটি পত্রে জোরপুর্বক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর রেখে দেন। দায়িত্ব পত্রে স্বাক্ষর রেখে দেয়ার পরে তারা চেয়ারম্যানকে অনাত্র সরে যেতে নির্দেশ দেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ আছে, চেয়ারম্যান অসুস্থতার কারনে ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফিরোজ খাঁনকে (তাপস) ১৯ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা চায়ের দোকানে বসা ছিল। ওই সময় আমতলী সদর ইউনিয়ন যুবদল আহবায়ক তাপন খাঁন আরো কিছু লোক নিয়ে এসে চেয়ারম্যানকে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। চেয়ারম্যান স্বাক্ষর দিতে রাজি ছিল না। তখন যুবদল আহবায়ক তাপন হুমকি দিয়ে বলেন, হয় স্বাক্ষর দেন, নইলে থানায় চলেন। চেয়ারম্যান নিরুপায় হয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।

চায়ের দোকানদার শ্যামল বলেন, চেয়ারম্যান আমার দোকানে বসা ছিল। পরে তাপন খাঁনসহ বেশ কয়েকজন লোক এসে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারপর কি হয়েছে আমি জানিনা? এর বেশী কিছু বলতে পারবো না।

আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিঠু বলেন, ফিরোজ খাঁন (তাপস) গত ১৬ জুন থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। আমাকে অফিসে যেতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে আমি শ্যামলের চায়ের দোকানে বসা ছিলাম। ওই সময় তাপস খাঁনসহ যুবদল নেতাকর্মী এসে আমাকে তার লেখা একটি পত্রে স্বাক্ষর দিতে বলে। আমি স্বাক্ষর দিতে চাইনি। পরে হুমকি দেয় হয় স্বাক্ষর দেন, নইলে থানায় চলেন। আমি নিরুপায় হয়ে ক্ষাক্ষর দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ওই পত্রে কি লেখা আছে তা আমি জানিনা। আমাকে চিঠি পড়তেও দেয়া হয়নি।

আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ যুবদল আহবায়ক ইউপি সদস্য ফিরোজ খাঁন (তাপস) জোরপুর্বক চেয়ারম্যান স্বাক্ষর নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান অসুস্থ্যতার কারনে আমাকে ১৯ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান কেন আপনাকে চায়ের দোকানে বসে দায়িত্ব দিবে ইউনিয়ন পরিষদ অফিস ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা আমি বলতে পারবো না। চেয়ারম্যানকে আপনী তিন দিন অফিসে আসতে দেননি, বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

আমতলী উপজেলা যুবদল আহবায়ক মোঃ কবির ফকির বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। ফিরোজ খাঁন (তাপস) আমতলী সদর ইউনিয়ন যুবদল আহবায়ক। তিনি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, তিনি (তাপস) সংগঠন বিরোধী কোন কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকলে জেলা যুবদল আহবায়কের সঙ্গে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, ফিরোজ খানকে (তাপস) আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিনা তা আমি জানিনা। আমি এমন কোন চিঠি পাইনি। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যানের (মিঠু) কাছ থেকে জোরপুর্বক স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..