কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ও সেবাহীনতার অভিযোগে জর্জরিত। হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে রোগী, স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ওঠে আসে একের পর এক অস্বস্তিকর চিত্র যেখানে স্বাস্থ্যসেবা নয়, বরং অব্যবস্থাপনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে আবাসিক ওয়ার্ড সব জায়গায় রোগীদের হতাশা একই। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের শিথিলতা, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
রোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগে উঠে আসা প্রধান অনিয়মগুলো
১. সেবার নিম্নমান
সঠিক সময়ে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। নার্স সেবাকর্মীদের আচরণ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় তদারকির ঘাটতি স্পষ্ট।
২. সরকারি ওষুধ পাচারের অভিযোগ
রোগীরা জানান, ফ্রি ওষুধ পাওয়া কঠিন। অনেকের অভিযোগ সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি হয়ে যায়, যার প্রমাণ মেলে হাসপাতালের নিয়মিত ওষুধ সংকটে।
৩. দালালচক্রের দৌরাত্ম্য
হাসপাতালের ভেতর বাইরে দালালদের সক্রিয়তা প্রকট। রোগী নেওয়া থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ সবখানেই তাদের তৎপরতা বলে অভিযোগ।
৪. চিকিৎসকদের অনিয়মিত উপস্থিতি
অনেক চিকিৎসক নিয়মিত সময়ে হাসপাতালে থাকেন না। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়ে সাধারণ মানুষকে বেসরকারি চিকিৎসা নিতে বাধ্য হতে হয়।
৫. ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম
হাসপাতালে চলমান বিভিন্ন উন্নয়নকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, দায়িত্বহীন কাজ এবং ঠিকাদারি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
৬. যন্ত্রপাতি অচল
প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট কিংবা অচল পড়ে আছে। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব না হওয়ায় রোগীরা অতিরিক্ত খরচে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হন।
৭. খাবারের নিম্নমান
আবাসিক রোগীদের দাবী হাসপাতালের খাবার নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর। অনেকেই খাবার না খেয়ে বাইরের উপর নির্ভর করছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য দেননি। স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা কোনো দয়া নয় এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাই তাড়াইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়মগুলো দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।