বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন

আসিফের বাবার দাপটে মুরাদনগর ছাড়া তিন পরিবার

অনলাইন ডেস্ক:
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৫৭৫৫ বার পঠিত

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজারের কড়াইবাড়ীতে গত ৩ জুলাই রিক্তা আক্তারের চোখের সামনে একে একে কুপিয়ে ও পাথর দিয়ে থেতলিয়ে হত্যা করা হয় তার মা রুবি আক্তার, ভাই রাসেল ও বোন জোনাকিকে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত তার ছোট বোন রুমা আক্তার এখন রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে বাদ যায়নি তার ভাইয়ের ১১ মাস বয়সী শিশু রাইসাও।

টয়লেটে লুকিয়ে কোনোমতে প্রাণে বাঁচতে পেরেছেন রিক্তা আক্তার ও তার ভাবী মিম আক্তার। কিন্তু ঘটনার পর পলাতক থাকার কথা আসামিদের অথচ পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ভুক্তভোগী এই পরিবারকেই। রিক্তা আক্তারের অভিযোগ, হত্যা মামলার মূল আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহসহ প্রধান আসামিরা রয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার আশ্রয়ে। এ কারণেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

রিক্তা আক্তার বাংলাভিশনকে বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহসহ মূল আসামিরা সবাই এখনও বাইরে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। তারা বাইরে থেকে উল্টো আমাদেরই হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে আমাদের পেলেই শত শত টুকরো করে মারবে। তাই আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

এ ঘটনায় দোষীরা স্থানীয় সরকার ও যুব উন্নয়ন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের আশ্রয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিক্তা আক্তার এবং তার ভাবী মীম আক্তার।

গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর একই এলাকার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে আরও একটি ঘটনা। এই ঘটনার ভুক্তভোগী ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিখা রানীর অভিযোগ, ওইদিন তাকে স্কুলের একটি কক্ষে আটকে রেখে প্রথমে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হলে একপর্যায়ে তার ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই কক্ষে অবরুদ্ধ করে রেখে বিবস্ত্র করেও চালানো হয় নির্যাতন। পরে তাকে স্কুল থেকে বের করে ঘুরানো হয় গ্রামের প্রধান সড়কগুলোতে। যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ভিডিওতে শিখা রানীকে হেনস্থাকারীদের দলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসাইনকেও দেখা যায়।

এ বিষয়ে শিখা রানী বলেন, স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসিফের বাবা বিল্লাল হোসেনকে ২০১৪ সালে বহিষ্কার করা হলে তখন আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েছিলাম। এটাই আমার অপরাধ। এখন আমার ছাত্র আসিফ উপদেষ্টা হওয়ার পর খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে উপদেষ্টা হওয়ার পর তার বাবা আমার প্রতি সেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। শিমুল চেয়ারম্যান, সাত্তার মেম্বার, সালাউদ্দীন ও বাশারদের দিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছেন।

এ ঘটনায় আসিফের বাবা বিল্লাল হোসেন ও শিমুল চেয়ারম্যানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা করা হলে সেটিও খারিজ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন শিখা রানী।

ওই স্কুলের তৎকালীন সভাপতি স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর অভিযোগও প্রায় একই রকম। সেই সময় অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন ছেলে উপদেষ্টা হওয়ার পর তারা প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে দাবি তার।

মোহাম্মদ আলী বলেন, বিল্লাল হোসেন প্রধান শিক্ষক থাকাকালে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং আমার (মেনেজিং কমিটির সভাপতি) স্বাক্ষর জাল করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিলেন। আমাদের কমিটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার তার কাছে হিসাব চাইলেও তিনি দিতে পারেননি। এসব কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। এখন ছেলে উপদেষ্টা হওয়ার পর আমার পরিবারকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে হয়রানি করে আসছে।

মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, তাকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন করা হয়। পরে আসিফের বাবার সহযোগী মাসুদের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং গ্রামে সামাজিক কোনো কাজে অংশ না নেওয়ার মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেতে হয় তাকে।

এছাড়াও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা তার লোকজন দিয়ে স্থানীয় মাছ চাষী দুলাল চন্দ্রের পুকুর দখল ও গাছ কেটে নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন ওই চাষী। এ ঘটনায়ও শিমুল চেয়ারম্যান, সাত্তার মেম্বার, সালাউদ্দীন, মাসুদ ও বাশাররা জড়িত বলেও অভিযোগ এই ভুক্তভোগীর।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বিল্লাল হোসাইন বাংলাভিশনকে বলেন, শিমুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার একটা ছবি ছড়িয়ে বলা হচ্ছে আমি নাকি ত্রিপল মার্ডারকারীদের আশ্রয় দিচ্ছি। শিমুল আমাদের ইউনিয়নের রানিং চেয়ারম্যান আর আমি স্কুলের হেড মাস্টার। স্বাভাবিকভাবেই তার সঙ্গে আমার উঠা-বসা হতে পারে। একে-অপরকে চা খাওয়াতে পারি। কিন্তু সেই সময়ে ছবি তুলে সেটা প্রচার করে আমাদের অযথা দোষী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ এই ছবিটা আরও ৬ মাস আগের, আর মার্ডার হয়েছে ৩ জুলাই।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতা কায়কোবাদ মনে করছেন আসিফ মাহমুদ এই আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। এজন্য তাকে যেকোনো বিষয়ে টেনে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন তারা। কারা এসব ছড়াচ্ছে আমরা সব দেখতেছি। যে বা যারা এসব ছড়াচ্ছে তাদের আমরা ধরবো। কী কারণে বলছে প্রমান দিতে বলবো। প্রমান না দিতে পারলে মানহানির জন্য এদেরকে কোন জায়গায় যে নেব আমরা…।

বাবার বিরুদ্ধে ওঠা ক্ষমতার অপব্যাবহারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মোবাইলে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সুত্র: বাংলাভিশন

 

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..