টয়লেটে লুকিয়ে কোনোমতে প্রাণে বাঁচতে পেরেছেন রিক্তা আক্তার ও তার ভাবী মিম আক্তার। কিন্তু ঘটনার পর পলাতক থাকার কথা আসামিদের অথচ পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ভুক্তভোগী এই পরিবারকেই। রিক্তা আক্তারের অভিযোগ, হত্যা মামলার মূল আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহসহ প্রধান আসামিরা রয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার আশ্রয়ে। এ কারণেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
এ ঘটনায় দোষীরা স্থানীয় সরকার ও যুব উন্নয়ন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের আশ্রয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিক্তা আক্তার এবং তার ভাবী মীম আক্তার।
এ বিষয়ে শিখা রানী বলেন, স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসিফের বাবা বিল্লাল হোসেনকে ২০১৪ সালে বহিষ্কার করা হলে তখন আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েছিলাম। এটাই আমার অপরাধ। এখন আমার ছাত্র আসিফ উপদেষ্টা হওয়ার পর খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে উপদেষ্টা হওয়ার পর তার বাবা আমার প্রতি সেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। শিমুল চেয়ারম্যান, সাত্তার মেম্বার, সালাউদ্দীন ও বাশারদের দিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছেন।
ওই স্কুলের তৎকালীন সভাপতি স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর অভিযোগও প্রায় একই রকম। সেই সময় অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন ছেলে উপদেষ্টা হওয়ার পর তারা প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে দাবি তার।
মোহাম্মদ আলী বলেন, বিল্লাল হোসেন প্রধান শিক্ষক থাকাকালে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং আমার (মেনেজিং কমিটির সভাপতি) স্বাক্ষর জাল করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিলেন। আমাদের কমিটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার তার কাছে হিসাব চাইলেও তিনি দিতে পারেননি। এসব কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। এখন ছেলে উপদেষ্টা হওয়ার পর আমার পরিবারকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে হয়রানি করে আসছে।
মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, তাকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন করা হয়। পরে আসিফের বাবার সহযোগী মাসুদের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং গ্রামে সামাজিক কোনো কাজে অংশ না নেওয়ার মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেতে হয় তাকে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বিল্লাল হোসাইন বাংলাভিশনকে বলেন, শিমুল চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার একটা ছবি ছড়িয়ে বলা হচ্ছে আমি নাকি ত্রিপল মার্ডারকারীদের আশ্রয় দিচ্ছি। শিমুল আমাদের ইউনিয়নের রানিং চেয়ারম্যান আর আমি স্কুলের হেড মাস্টার। স্বাভাবিকভাবেই তার সঙ্গে আমার উঠা-বসা হতে পারে। একে-অপরকে চা খাওয়াতে পারি। কিন্তু সেই সময়ে ছবি তুলে সেটা প্রচার করে আমাদের অযথা দোষী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ এই ছবিটা আরও ৬ মাস আগের, আর মার্ডার হয়েছে ৩ জুলাই।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতা কায়কোবাদ মনে করছেন আসিফ মাহমুদ এই আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। এজন্য তাকে যেকোনো বিষয়ে টেনে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন তারা। কারা এসব ছড়াচ্ছে আমরা সব দেখতেছি। যে বা যারা এসব ছড়াচ্ছে তাদের আমরা ধরবো। কী কারণে বলছে প্রমান দিতে বলবো। প্রমান না দিতে পারলে মানহানির জন্য এদেরকে কোন জায়গায় যে নেব আমরা…।
বাবার বিরুদ্ধে ওঠা ক্ষমতার অপব্যাবহারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মোবাইলে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।