রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সাভারে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলায় আহত ৮ বিডিআরসিএস এ দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে বহাল তবিয়তে ডা: শাহানা জাফর: খুটির জোর কোথায়? যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জাতিসংঘ-বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে: আইন উপদেষ্টা তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ নান্দাইল উপজেলা বিএনপি’র নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে শুভ ও সা’দ ড্রেনবিহীন রাস্তা, বৃষ্টি হলেই পানি জমে বিয়ানীবাজার সাভারের আশুলিয়ায় নিখোঁজ দুই মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ মিলল পুকুরে

বিডিআরসিএস এ দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে বহাল তবিয়তে ডা: শাহানা জাফর: খুটির জোর কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
  • ৫৭৫৭ বার পঠিত

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তহবিল বিভাগের পরিচালক ডা: শাহানা জাফর। আওয়ামী শাসনামলে একাধিপত্য কায়েম করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিত্তের মালিক হয়েছেন । অবৈধ উপায়ে বিত্ত-বৈভব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চাকরি জীবনে হেন কাজ নেই যা ডা. শাহানা জাফর করেননি। টাকার জন্য তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গনকে ‘গরুর হাটে’ পরিণতও করেছেন। গরুপ্রতি টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন শহীদ ময়েজ উদ্দীন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রাঙ্গণকেও। এতো কিছু করেও  ফ্যাসিস্টের এই দোসর বহাল তবিয়তে কিভাবে থাকে ? তার খুটির জোর কোথায় ? কে তাকে সহযোগীতা করছে ? এমন প্রশ্ন রেড ক্রিসেন্ট কমউনিটির।

অধিকতর তদন্ত করে দেখা যায় ডা. শাহানা জাফর এপ্রিল, ১৯৯৬ সালে মেডিক্যাল অফিসার পদে যোগদান করে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি, কিন্তু যোগদানের শুরু থেকেই অভিযোগের পাহাড় থাকলেও তিনি পরওয়া করেননি কোন কিছুই। যোগদানের ৮ মাসের মাথায়ই জানুয়ারী ১৯৯৭ সালে তার বিরুদ্ধে দেরীতে অফিসে আসা, সময়ের আগেই চলে যাওয়া, কাজে উৎসাহ না থাকা, সমন্বয় করে কাজ করার মানসিকতার অভাব, কাজে অমনোযোগী ও দায়িত্বশীলতার অভাব, শৃঙ্খলা ভঙ্গ,অশালীন আচরনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তৎকালীন রক্তকেন্দ্রের পরিচালক। সে ঘটনায় পরবর্তীতে তাকে কঠোরভাবে সাবধান করেছে সোসাইটি। জানুয়ারী ১৯৯৭ সালে একাধিক উধ্বর্তনের সাথে অসদাচরনের কারনে আরো একটি শোকজ, মে ২০০৬ সালে অদূরদর্শিতার জন্য আবার শোকজ পান তিনি, জুন ২০০৭ সালে সোসাইটির টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজের কাছে রাখা ও অন্যান্য আরো অনেক অভিযোগে শোকজ করা হয়, ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সালে সোসাইটির এক কর্মীর আত্মীয়কে রক্ত থাকা সত্ত্বেও রক্ত না দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী, জুলাই ২০১১ সালে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়, বরখাস্তের আলোকে তদন্ত করা হলে তদন্ত প্রতিবেদনও তার বিরুদ্ধে যায়, তাকে বরখাস্তের সকল তদন্ত প্রতিবেদন তার বিরুদ্ধে গেলেও আগষ্ট ২০১১ সালেই তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকুরিতে পুনরায় যোগদান করেন, বরখাস্তের একই বছরে অর্থাৎ ২০১১ সালে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে আগষ্ট ২০১১ সালে তিনি অদৃশ্যের শক্তি তথা সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হওয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মেডিক্যাল অফিসার থেকে ডেপুটি ডাইরেক্টর পদে পদোন্নতি পান সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এই ড: শাহানা জাফর।

২০১৭ সালে ডা: শাহানা জাফরের বিরুদ্ধে আবারো টাকা নিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগের কারনে মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়, এপ্রিল ও মে ২০১৮ সালে আবারো চেয়ারম্যান বরাবর ‘আমেনা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ ডা: শাহানা জাফরের কালো থাবা থেকে বাাঁচাতে শীর্ষক ও উৎকোচের বিনিময়ে শারমিন আক্তার নামে এক নারীকে ‘আমেনা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ‘ রাখার বিষয়ে পরিচালনা কমিটিবৃন্দ ও ডোনারদের লিখিত ২টি আলাদা আলাদা অভিযোগ প্রদান করা হলে সোসাইটি থেকে জবাব চেয়ে চিঠি প্রদান করা হয়, এ ছাড়া ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে মাতৃসদন হাসপাতালের জমি বিক্রি করে দেড়কোটি টাকা ভাগাভাগিরও অভিযোগ ছিল, এর পর সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে সোসাইটির ‘শহীদ ময়েজ উদ্দিন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে’র ডা: শাহানা জাফর ইনচার্জ থাকাকালীন হাসপাতাল চত্ত্বরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া টাকার বিনিময়ে কোরবানীর গরু রাখা ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত করলে টাকার বিনিময়ে গরু রাখা ও টাকা আত্মসাতের সত্যতা পায়, সেখান থেকেও অদৃশ্যের শক্তির বলে পার পেয়ে যান তিনি।

ঘটনা এখানেই শেষ নয় ডা: শাহানা জাফরের বিরুদ্ধে অগণিত অভিযোগ থাকলেও আবারও ডিসেম্বর ২০১৯ সালে তাকে ডেপুটি ডাইরেক্টর থেকে ডাইরেক্টর পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। প্রমোশন পাওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মাথায় জানুয়ারী ২০২১ সালে আবারো ‘ নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট মিথ্যা ও অসত্য তথ্য দেয়া ও বিভাগীয় স্টাফদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের অভিযোগে শোকজ করা হয়। শোকজ অনুযায়ী ডা: শাহানা জাফর জবাব দিলে তাহা সন্তোষজনক নয় বলে ফ্রেব্রয়ারী ২০২১ সালে তাকে সতর্ক করা হয়।

সর্বশেষ ডা: শাহানা জাফরকে গত ১৫ এপ্রিল (২০২৫ইং) তারিখে মহাসচিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে ‘জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃ সদন হাসপাতাল, চট্রগ্রামে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যোগদান না করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে সময় লাগবে বলে অজুহাত দেখিয়ে সোসাইটির কাছ থেকে কিছু দিন সময় নেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো তিনি সেই সময়ের মধ্যে সেই মহাসচিবের আদেশের মাধ্যমেই অদৃশ্যে শক্তির কারিশমায় নিজের বদলী আদেশ স্থগিত করান। এ যেন এক বাংলা ছায়াছবির দৃশ্য তবে ঘটনাগুলো কোন গল্প উপন্যাসের কাহিনী নয় পুরোটাই বাস্তব। এমন কাহিনী কবে শেষ হবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ? সে প্রশ্ন রয়েই যায়।

জানা গেছে ডা: শাহানা জাফর অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে এখনও সকল ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন- এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সোসাইটির প্রধান কার্যালয় ও বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, ডা: শাহানার মতো কর্মকর্তার অপকর্মের ফলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মতো বৃহৎ এই মানবিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম আগেও ক্ষুন্ন হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ডা. শাহানা জাফরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম, অনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার অভিযোগ উঠলেও তিনি বিশেষ কৌশলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে সবসময় রেহাই পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকার পরও কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন করে বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে ডা: শাহানা জাফরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন যা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হচ্ছে আমি কর্তৃপক্ষের বাইরে কোন কাজ করিনা, আমার সিনিয়ররা যখন যেভাবে বলেন আমি ঠিক সেটাই অনুসরন করি। বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার দাপ্তরিক কাজ আরেকজনকে হ্যান্ডওভার করার জন্য সোসাইটির কাছ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নিয়েছি।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ড. কবির এম আশরাফ আলমের কাছে ডা: শাহানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদ বাংলাদেশ’কে বলেন যদি কারো বিরুদ্ধে সঠিক কোন অভিযোগ থাকে তাহলে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানীত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডা: শাহানা জাফরের চাকুরির শুরু থেকেই বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বলেন কোন অপরাধ পুরনো হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যায় না, তার বিরুদ্ধে আগের অভিযোগ গুলিও খতিয়ে দেখা হবে। বদলীর বিষয় বলেন তিনি সোসাইটির কাছে আবেদন করে সময় নিয়েছে।

উল্লেখ্য, মহাসচিব ডা: শাহানার বদলির বিষয়ে সময় নিয়েছেন বলে গত ১৩ মে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন অথচ গত ৩০ এপ্রিল ডা: শাহানা জাফরের বদলী আদেশ স্থগীত করা হয় তার স্বাক্ষরিত আদেশপত্রে, যা তিনি প্রকাশ বা উল্লেখ করেন নি, যা আরো বড় রহস্যের জন্ম দিল।

(শীঘ্রই আসছে পর্ব-২)

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..