বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ মহামারী আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরগুনাকে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হাসপাতালে ঠাঁই মিলছে না অনেকের।
আইইডিসিআর জানিয়েছে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের অনিরাপদ পদ্ধতি বরগুনায় এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি করছে, যা ডেঙ্গুর বিস্তারকে আরও জটিল করে তুলছে। সাধারণ মানুষ জানেই না কীভাবে পানি সংরক্ষণ করতে হবে, আর এই অজ্ঞতার ফাঁক গলে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু ।
তারই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বাস্থ্য বিভাগ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে বৈঠকের পর বরগুনার জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সাথে সমন্বয় করে বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে।
প্রথম পর্যায়ে ২০-২৪ জুন,২০২৫ পর্যন্ত ০৫ দিন ব্যাপী বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়। ডেঙ্গুর লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায়, পরিচ্ছন্নতা এবং কীভাবে পানি জমা না রেখে এডিস মশার বিস্তার রোধ করা যায়—এসব বিষয়ে মানুষকে সহজ ভাষায় বোঝানো হয়। বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, তালতলী, বেতাগী, আমতলী এবং বামনা উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে বরগুনায় ১০ হাজার এবং সরকার কে মোট ১ লাখ পিস লিফলেট প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৭-২৯ জুন ,২০২৫ পর্যন্ত ৩ দিন ব্যাপী বরগুনা জেলার সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলায় হাসপাতাল, পৌরসভা এলাকা, বাজারঘাট, বাসস্ট্যান্ড ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। মশার লার্ভা নষ্ট করা, জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, নর্দমা পরিষ্কার রাখা এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণ যুব রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছা সেবক দের দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। স্থানীয় জনগণকে নিজের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয় এবং তাদের মধ্যে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।
বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে প্রতিদিন রেড ক্রিসেন্টের ৮ জন করে স্বেচ্ছাসেবক দুই শিফটে কাজ করছেন। তারা হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ, মশারি টানিয়ে দেওয়া, হাসপাতালে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের মধ্যে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং ওয়ার্ডগুলোর স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণেও সহায়তা করছেন।
বরগুনা যুব রেড ক্রিসেন্ট এর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “এই ক্রান্তিকালে আমরা সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই, সবাই মিলে একসাথে কাজ করে বরগুনাকে ডেঙ্গু মুক্ত করতে।”
এছাড়া রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক পোস্ট, স্থানীয় রেডিও এবং মসজিদে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগও অব্যাহত রয়েছে। বরগুনার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বেচ্ছাসেবকরা গিয়ে মশার বিস্তার রোধে কমিউনিটি মিটিং করছে।
মানবিক সহায়তা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্ট ও সরকারি সংস্থার যৌথ এই উদ্যোগ বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।