রংপুর বিভাগের আট জেলার সর্বত্রই পানির অভাব আমন ধানের চারা রোপণ করতে পাছে না কৃষকগণ। এমন পরিস্থিতিতে আমন ধান চাষে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এখন আষাঢ় মাস। বর্ষাকাল। এ সময়ে মাঠ-ঘাট, খাল-বিলে, নদী নালাতে পানি থৈ থৈ থাকার কথা। সেই সময়ে মাঠ-ঘাট, খাল-বিলে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। বিলের মাঠে মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে এমন পরিস্থিতি হয়েছে আমন চাষে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কৃষকরা বলেন গত ১০/১২ দিন আগে বৃষ্টিপাত হলেও ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেছে জমির পানি। পানি না থাকার কারণে অধিকাংশ জমি ফেটে চৌচির হচ্ছে। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময়ে চারা রোপণ করতে পারছে না। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা থাকলে বৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখতে পারছেন না কৃষকরা। দিনের তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। প্রখর রৌদ্রে জমির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার হাবু, বালারঘাট, চেংমারী, চেংমারী মান্দ্রাইন, মৌলভীবাজার, মন্থনা, মর্ণেয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দেখা যায় অধিকাংশ জমিতে পানি নেই। অনেক জমি শুকিয়ে গেছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন কিংবা বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে সেচ দিয়ে জমিতে আমন ধানের চারা লাগানোর কাজ করছে। হাবু গ্রামের কৃষক রফিকুল বলেন, চাষ করা জমি শুকিয়ে গেছে বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিয়ে জমি চাষ করা হচ্ছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন,বর্ষাকাল হলেও বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে জমিতে আমান ধানের চারা লাগানো হচ্ছে। সময়মত ধানের চারা লাগাতে না পারলে আমন ধানের ফলন ভাল হবে না। খরচ বেশি হলেও সেচ দিয়ে আমন ধান ক্ষেতে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মটুকপুর এলাকার কৃষক আব্দুল হালিম বলেন,কয়েক দিন আগে সামান্য বৃষ্টি হলেও বর্তমানে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে জমিতে পানি নাই। আষাঢ় মাস চলে যাচ্ছে। এখনো জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারি নাই। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার চক কাঞ্চন গ্রামের কৃষক কামরুজ্জান বলেন,খাল-বিলে পানি না থাকার কারণে জমিতে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি অভাবে পঁচানো (জ্যাক) সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই নিচু জায়গায় বা খালে পাট পাঁচানোর জন্য রাখলে পানি কম হওয়ার কারণে সোনালী আঁশ নামে খ্যাত পাটের রং কালো হচ্ছে। ফলে এসব পাটের দাহিদা ও দাম কম।
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, জমিতে পানি নেই। আকাশের অপেক্ষায় আর থাকা যায় না। শ্যালো মেশিন লাগানো লাগবে। চারার বয়সও দিন দিন বাড়ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহিনুর ইসলাম বলেন, এখনই আমন চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। জমিতে পানি না থাকলে সেচ দিয়ে চারা লাগানোই উত্তম। বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে চারার বয়স বেশি হয়ে গেলে ফলনে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা বেশি।