অভিযানে নেই কার্যকর উদ্যোগ — তিন দপ্তর ‘ম্যানেজ’ অভিযোগে বিতর্ক
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার উপকূলীয় বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীতে দেদারসে চলছে জাটকা ইলিশ শিকার। স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই এ অবৈধ শিকার অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরকার ১ নভেম্বর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সাগর ও নদীতে জাটকা ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা ২.৬ ইঞ্চি (৬.৫ সেমি) ফাঁসের জাল দিয়ে প্রতিদিন অবাধে ইলিশ শিকার করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ—ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ও সোনাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মজিবর ফরাজীসহ প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ীরা তিন দপ্তরকে ম্যানেজ করেই এই অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
প্রতিদিন ফকিরহাট, আমতলী ও তালতলীর বিভিন্ন আড়ত থেকে প্রায় ৫–৭ টন জাটকা ইলিশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে—তালতলীর ফকিরহাট, আশারচর, নিশানবাড়িয়া, নিন্দ্রা ও সকিনা এলাকায় অবৈধভাবে জাটকা শিকার করে তা দাদন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে।
স্থানীয় জেলে জুয়েল ও শাহীন জানান, আমরা দাদন নিয়েছি, তাই দাদনের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করছি। দাদন ব্যবসায়ীরাই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে।
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ছত্তার ফকির ও ইলিয়াস বলেন, দাদন ব্যবসায়ীরা জেলেদের চাপ দিয়ে জাটকা ধরতে বাধ্য করছে।
তবে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজিবর ফরাজী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেলেরা নিজেরাই নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করছে, আড়ৎ ব্যবসায়ীরা এতে জড়িত নয়।
তালতলী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাগর ভদ্র বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। তবে কতজন জেলেকে আটক বা কত জাল জব্দ হয়েছে—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, আমি কিছুদিন অনুপস্থিত ছিলাম, তাই অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, বরাদ্দ না থাকায় অভিযান চালানো যাচ্ছে না, তবে বরাদ্দ পেলে অভিযান জোরদার করা হবে।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেবক মণ্ডল বলেন, কোন অবস্থাতেই জাটকা শিকার, পরিবহন বা বিপণন করা যাবে না। এর সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় প্রায় ১৩ হাজার ৬৯৯ জন জেলে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার জেলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগরে ইলিশ শিকার করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।