পদ্মা ব্যাংক পটুয়াখালী ও মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী শাখা থেকে জা্ল পে-অর্ডার, ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি, গ্রাহকের এফডিআরের টাকা আত্মসাৎ করে চাকরি হারিয়েছেন নাজমুল হুদা সোহাগ নামে এক কর্মকর্তা।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ড. আতাহার আলীর ভাগিনা পরিচয়ে ব্যাংকে চাকরি হয় তার। চাকরির শুরুতেই পটুয়াখালী শাখায় যোগদান করেই শুরু করেন জাল পে-অর্ডার, ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টির ব্যবসা। শুরুতেই তিনি পটুয়াখালীর একাধিক ঠিকাদার দিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেন, সেই সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন মেসার্স আজাদ কনট্রাকশন এর স্বাত্ত্বাধীকারী আবুল কালাম আজাদ ও ঠিকাদার বাদল ওরফে মেয়র বাদল। এই সিন্ডিকেট দিয়ে তিনি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ইজিবি টেন্ডারের আওতায় ব্যাংক গ্যারান্টি এবং টেন্ডারের অনূকুলে ভূয়া পে-অর্ডার দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এতে রাজস্ব হারিয়েছেন সরকার লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ব্যাংক। পটুয়াখালী এলজিইডি, গনপূর্ত অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর উন্নয়মূলক কাজের ইজিবির আওতায় যত টেন্ডারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে উক্ত দরপত্রে পটুয়াখালীতে সোহাগের নির্ধারিত ঠিকাদাররা পদ্মা ব্যাংক পটুয়াখালী শাখা থেকে জাল পে-অর্ডার দিয়ে ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। উক্ত জাল পে-অর্ডারের অনূকুলে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান পড়েছেন বিপাকে। কোন কোন ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সরকার ৫% জামানত হিসেবে ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা ক্যাশ করার জন্য ব্যাংকে চিঠি দিলে ব্যাংক সূত্রে জানা যায় ঐ ব্যাংক গ্রারান্টি পদ্মা ব্যাংক থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইস্যু করা হয়নি। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এমনই একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে অডিট পরিচালনা করলে নাজমুল হুদা সোহাগসহ অনেকের জালিয়াতীর প্রমাণ পায়। অডিট আপত্তিতে আরো উঠে আসে সুবিদখালী শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় অনেক গ্রাহকের এফডিআরের টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরীচ্যুত করে। চাকরি হাড়ানোর পরে পদ্মা ব্যাংক সুবিদখালী শাখায় শুক্রবার বন্ধের দিনে ব্যাংকে গিয়ে মূল ফটক ভেঙ্গে ঢুকে ম্যানেজারের রুমের আলমারী ভেঙ্গে তার বিরুদ্ধে থাকা প্রমানপত্র(ডকুমেন্টস)চুরি করে নিয়ে যান। ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজে নাজমুল হুদা সোহাগকে চিহিৃত করা হয়। পরে ব্যাংক ম্যানেজার মির্জাগঞ্জ থানায় তার নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পটুয়াখালী শহরে ১ নং লেন সবুজভাগের পটুয়াখালী টাওয়ারে প্রায় কোটি টাকা মূল্যে আলিশান একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। মির্জাগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেন পাকা বাড়ি। এ ছাড়াও দূর্নীতির টাকায় ঢাকার টঙ্গিতে শুরু করছেন অবৈধ কেমিক্যালের ব্যবসা। সামান্য বেতনে চাকরী করে এতো বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন কি করে প্রশ্ন এলাকাবাসীসহ সকলের।
বিষয়টি নিয়ে পদ্মা ব্যাংক এর প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, মহিউদ্দিন আলমগীর এর আমলে এই দূর্নীতিবাজ নাজমুল হুদাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নাজমুল হুদাসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তারা মিলে পটুয়াখালী ও সুবিদখালী শাখায় প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার মতো দূর্নীতি করেছে।এ কারনে এরা অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনীব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে নাজমুল হুদা সোহাগের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন তার নিউজ যাতে না করা হয় সে বিষয়ে এক নামধারী সাংবাদিককে দিয়ে নিউজ না করার জন্য হুমকী প্রদান করান।