বরগুনার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া, আমখোলা ও নিদ্রার চর এই তিনটি জনপদ আজ যেন ডুবে আছে অসহায়তার স্রোতে। বৃষ্টির পানি আর পায়রা নদীর জোয়ার মিলেমিশে প্রতিদিন ডুবিয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি আর মানুষের শেষ আশাটুকু।
এই তিন এলাকার হাজারো মানুষ বসবাস করেন ভেরিবাঁধের বাইরে। ফলে সামান্য জোয়ারেই ভেসে যায় তাদের জীবন-জীবিকা।
নলবুনিয়ার কৃষক আনোয়ার মল্লিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বারবার নদীর ভাঙনে জমি হারিয়েছি। এবার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে থাকার ঘর। রান্না করার উপায় নেই, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। টেকসই ভেরিবাঁধ পেলে হয়তো আজ পথে বসতে হতো না। আমরা শুধু বাঁচার অধিকার চাই যেটা আমাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছে সর্বনাশা পায়রা নদী।
আমখোলার রোকেয়া বেগমের চোখেও একই আর্তি আমরা বাঁধের বাইরে থাকি বলে কেউ আমাদের কষ্ট দেখেও না। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি আমাদের ঘর-বাড়ি কেড়ে নিচ্ছে। আমরা আশ্রয় চাই, একটু নিরাপত্তা চাই।
অন্যদিকে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আল মাসুম জানান, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। হতাহতের খবর নেই। ভেরিবাঁধের বাইরে পানি উঠেছিল, এখন নেমে গেছে।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র আঁকে। মানুষগুলো শুধু বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করছে, প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছে প্রকৃতি আর অবহেলার কাছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জনপদগুলো ক্রমাগত ঝুঁকিতে থাকলেও এখনো পর্যন্ত টেকসই কোনো সমাধান হয়নি। ফলে বাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলো বছরের পর বছর ধরে বন্যা ও জোয়ারের মুখে তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন কেন তারা বাঁচার অধিকার পাবে না? বাঁধের বাইরে কি মানুষের জীবন মূল্যহীন? তালতলীর এই মানুষগুলো শুধু দাবি করছে আমাদের একটু টেকসই বাঁধ দিন, একটু বাঁচার সুযোগ দিন!