কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তালজাঙ্গা বাজার। শতবর্ষী ঐতিহ্য বহন করে চলা এ বাজার শুধু কেনাবেচার স্থান নয়, এটি এলাকার মানুষের স্মৃতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী। জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, প্রাচীন পুকুর, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন আর রাজচন্দ্র রায় উচ্চ বিদ্যালয়কে ঘিরে তৈরি এ বাজার এক সময় ছিল বাণিজ্য ও আড্ডার প্রাণকেন্দ্র।
মঙ্গলবার (১৮নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুকুরপাড়ের শান্ত পরিবেশ, পুরনো গাছপালা আর ঐতিহাসিক স্থাপনার উপস্থিতি তালজাঙ্গা বাজারকে এলাকার মানুষের কাছে বিশেষ করে তোলে। দিনের বেলায় বাজারের পাশের খেলার মাঠে বসে হাট, যেখানে এক সময় আশপাশের গ্রামের মানুষদের ভিড়ে সরগরম থাকত এলাকা কিন্তু বাজারের বর্তমান অবস্থা তার অতীতের ঐতিহ্যের সঙ্গে যেন বিস্তর অসামঞ্জস্য। আধুনিকতার ছোঁয়া তো দূরের কথা, মৌলিক অবকাঠামোগত সুবিধাও পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।
বাজারের প্রবেশপথগুলো ভাঙাচোরা; পুরনো টিনের ছাউনি থেকে খসে পড়ছে টিন; সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো এলাকা, নেই সড়কবাতি। ফলে রাতের বেলায় ভয় ও অনিরাপত্তার মধ্যে থাকেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
বাজারে নেই সিসি ক্যামেরা। এতে চোরচক্র একের পর এক চুরি চালিয়ে যাচ্ছে। দোকানদারদের অভিযোগ, বাজারে নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাতে দোকান খালি রেখে যাওয়া রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তালজাঙ্গা বাজার কমিটির ২বারের নির্বাচিত সভাপতি ও তালজাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এটিএম নূরুল হুদা ওরফে জুয়েল পাশা বলেন-
“শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি এখন অবহেলার স্বীকার। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এ বাজারে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এখানে কোন সড়কবাতি নেই। বাজারের প্রবেশপথগুলো ভাঙাচোরা, টিন গুলো খসে পড়ছে, সিসি ক্যামেরা নেই, ফলে দোকানীরা চুরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। ঘন ঘন চুরি হচ্ছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বাসিন্দাদের দাবি, এতো পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজারকে অবহেলায় ফেলে রাখা চলতে পারে না। তারা দ্রুত বাজার সংস্কার, রাস্তা উন্নয়ন, আলো স্থাপন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি তুলেছেন।
তালজাঙ্গা বাজার শুধু একটি হাট-বাজার নয়; এটি এলাকার মানুষের জীবন, ঐতিহ্য আর দৈনন্দিন সত্তার অংশ। এ বাজারকে আধুনিকায়ন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
তা নাহলে বিলুপ্তির পথে ধাবিত হবে শতবর্ষী ঐতিহ্যের এই বাজার, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো এলাকার সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা।