রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের বাজেট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার মডার্ণ মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে দ্রুত বৈষম্য নিরসনে দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। দাবি আদায় না হলে অসহযোগ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২৮ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া সড়ক বিজয় সড়ক ও আবু সাঈদ চত্ত্বর হয়ে মডার্ণ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় ব্যস্ততম মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। এসময় শিক্ষার্থীরা রক্ত লাগলে রক্ত নে, রংপুরে বাজেট দে, লাশ লাগলে লাশ নে, রংপুরে বাজেট দে, ঢাবির সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, ইন্টারিমের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান, আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে, বৈষম্যের ঠাঁই নাই, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, ভিক্ষা লাগলে ভিক্ষা নে, রংপুরে বাজেট দে ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকেন। ব্লকেড কর্মসূচি থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ উত্তরবঙ্গে বৈষম্য নিরসনে দুই দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো ১. উত্তরবঙ্গের অনন্তকালের বাজেট বৈষম্য নিরসন ও এ অঞ্চলের সার্বিক (অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত) উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি সতন্ত্র আঞ্চলিক কমিশন গঠন করতে হবে। ২. উত্তরবঙ্গের বাতিঘর অর্থাৎ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। এসময় দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে উত্তরবঙ্গ ব্লকেড ও উত্তরবঙ্গ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। দুই দফা দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, উত্তরবঙ্গের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রংপুরের সাধারণ জনতাকে নিয়ে আগামীকাল (মঙ্গলবার) আবু সাঈদ চত্ত্বরে সমবেত হয়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এই উদ্দেশ্য আবু সাঈদ চত্ত্বর থেকে মার্চ টু জেলা প্রশাসক ও মার্চ টু বিভাগীয় কমিশনার কর্মসূচি পালন করা হবে। শিবলি সাদিক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে কোন প্রকার বৈষম্য থাকবে না কিন্তু আমরা জুলাই পরবর্তী সময় দেখছি সরকার রংপুর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাজেট বৈষম্য করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস রুম সংকট, আবাসন সংকট এবং রংপুরের নানা উন্নয়নে কোনো বাজেট দেয়নি অন্তবর্তীকালীন সরকার।
আমরা চাই এই সকল কাজের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হোক। উত্তরবঙ্গের প্রতি যে উন্নয়ন ও বাজেট বৈষম্য যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে, সেই বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন। আরেক শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, রংপুর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও বাজেট বৈষম্য দেখতে পেয়েছি। ভেবেছিলাম চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর এ ধরণের বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু এখনো রংপুর বিভাগ বাজেট বৈষম্য শিকার। দূর হয়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি অবহেলা। উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন কাজে ন্যূনতম কোনো বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি। আমরা এই বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজপথে নেমেছি।
প্রসঙ্গত, ২৭ জুলাই রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আট হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন করা হয়। তবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও উত্তরবঙ্গের জন্য কোনো বাজেট অনুমোদন করা হয়নি।