বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
কুমিল্লার খ্যাতনামা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল হাসান আখন্দ আর নেই বরগুনা জেলার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি স্থগিত স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা জনগনের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নাই- পারভীন আক্তার বেড়া ভাঙার প্রতিবাদে বৃদ্ধ চাচাকে পিটিয়ে জখম জাতীয় পার্টির কাঁধে ভর করে ফ্যাসিবাদের উত্থান চেষ্টা: আবদুল হালিম উন্নত চিকিৎসার জন্য নুরকে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার দাম কমলো এলপি গ্যাসের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি বুধবার বরগুনায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর মামলায় ১২ জন আইনজীবী কারাগারে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় জমি দখল, মেরে ফেলার হুমকি!

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মা ও দেবর মিলে ৮ বছরের শিশু সন্তানকে হত্যা

মনজুর মোর্শেদ তুহিন ( পটুয়াখালী প্রতিনিধি) :
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৫৯৪০ বার পঠিত

মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী)

জমি জমার বিরোধে প্রতিবেশীকে ঘায়েল করতে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের রামভল্লবপুরে ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী শিশু মরিয়মকে (৮) কে হত্যা করে তার গর্ভধারিনী মা ও চাচা।

৩রা ফেব্রুয়ারী (শনিবার) সন্ধ্যার পর শিশু মরিয়মকে নিয়ে তার মা রিনা বেগম পাশের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে একটি পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকেই উপস্থিত ছিল শিশুটি চাচা মোঃ সেন্টু মৃধা। দেবর ভাবি মিলে পরিত্যক্ত বাড়িতে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শিশুটিকে।

জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের পর পরই রিনা বেগম বাড়িতে এসে মরিয়মকে খুজে না পাওয়ার ভান ধরে চিৎকার চেঁচামেচি ও খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বাড়ির সকলে জেনে যায় মরিয়ম কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরই বাড়ির সকলে মিলে শিশুটিকে খুজতে থাকে। হত্যার সময় মেয়ের রক্ত কাপড়ে লেগে থাকায় তা ধুয়ে ফেলার জন্য রিনা বেগম খোঁজার ভান করে পুকুরে নেমে খুঁজতে থাকে। কিন্তু সবাই জানত মরিয়ম সাঁতার জানে। দিশেহারা প্রতিবেশীরা শিশুটিকে খুঁজে পেতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়। রাত ৯ টার দিকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ভিটায় শিশুটির রক্তমাখা মরদেহ ও গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার পরপরই দশমিনা থানার পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। কিন্তু তাৎক্ষণিক কে বা কাহারা হত্যা করে তাহার কোন ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরদিন সকালে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের দেয়া ঘটনার বিবরণে পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তবে তার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তায় সঙ্গে সঙ্গেই সন্দেহ ভাজনদের গ্রেফতার না করে করা নজরদারিতে রাখেন যেন তারা পালিয়ে যেতে না পারে। হত্যার সাথে জড়িতদের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরই ৫ ফেব্রুয়ারী মরিয়মের চাচা সেন্টুকে গ্রেফতার করে দশমিনা থানা পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের জড়িত মরিয়মের মা রিনা বেগমকেও গ্রেফতার করে। উভয়ই হত্যাকাণ্ডের সত্যতা স্বীকার করে পুলিশ ও আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।

পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা যায়, দুই বছর পূর্ব থেকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল শিশু মরিয়মের বাবা ও চাচাদের। মামলায় জর্জারিত হয়ে আসামীদের অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়। হারুন মৃধা ও রাজ্জাক মৃধা গংদের ঘায়েল করতে তাদেরকে ফাঁসির আসামি বানানোর জন্য অনেক পূর্ব থেকেই শিশু মরিয়মকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার মা ও শিশুটির আপন চাচা।ঘটনার দুইদিন পূর্বে শিশুটি ফুপু বাড়িতে বেড়াতে আসে স্বপরিবারে। সুযোগ বুঝে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঐদিন সন্ধ্যার পর শিশুটিকে নির্জন ও পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। আসামিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চাচা লাঠি দিয়ে শিশুটির মাথায় সজরে দুইটি আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে তার মা শিশুটির ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে এবং এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে দুইজন দুই দিকে চলে যায়।

এ ব্যাপারে দশমিনা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটনার পর দিন সকালে পুলিশ সুপার মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তথ্য উদঘাটন হওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, ক্লু লেস এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। গর্ভধারিণী মা তার দেবরের সহযোগিতায় সন্তানকে হত্যা করেছে। হত্যার রহস্য ও কারণ উদঘাটন হয়েছে। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মূল পরিকল্পনাকায় ও হত্যার সঙ্গে শিশুটির মা ও চাচাই জড়িত। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত আলামত জব্দ করা হয়েছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..