রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সাভারে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলায় আহত ৮ বিডিআরসিএস এ দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে বহাল তবিয়তে ডা: শাহানা জাফর: খুটির জোর কোথায়? যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জাতিসংঘ-বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নে যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে: আইন উপদেষ্টা তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ নান্দাইল উপজেলা বিএনপি’র নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে শুভ ও সা’দ ড্রেনবিহীন রাস্তা, বৃষ্টি হলেই পানি জমে বিয়ানীবাজার সাভারের আশুলিয়ায় নিখোঁজ দুই মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ মিলল পুকুরে

ভিক্ষাই শতবর্ষী হকার সৈয়দ আহম্মদ সংসারের চাবিকাঠি

লক্ষীপুর প্রতিনিধিঃ
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৬১৭৯ বার পঠিত

লক্ষীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর গ্রামের হকার সৈয়দ আহম্মদ ৫ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার ৬ ছেলে ও মেয়েরাও ষাটোর্ধ্ব বয়সী। এক ছেলে আবুল কালাম (৬০) বাবার পেশা পত্রিকা বিক্রি ধরে রেখেছেন। কিন্ত বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পত্রিকা বিক্রির পয়সায় তারও সংসার চলে না।

অন্যছেলেদের কোনভাবে সংসার চললেও ষাট বছর বয়সী স্বামী পরিত্যক্ত দুই মেয়ে আর শতবর্ষী স্ত্রীসহ চারজনের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে এখন জীবন চালাচ্ছেন তিনি। টাকার অভাবে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেনা।
একশত বার বছর বয়সী সৈয়দ আহম্মেদ একসময় লক্ষীপুরের পথে ঘাটে পত্রিকা নিয়ে হাজির হতেন মানুষের ধারে। স্থানীয়ভাবে সৈয়দ হকার নামে এ ব্যক্তিটি জীবনের আশিটি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন পত্রিকা বিক্রি করে।

এদিকে স্থানীয় পত্রিকা সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশে সবচেয়ে আদি পত্রিকা বিক্রেতা সৈয়দ আহম্মেদ। তবে এখন ভিক্ষাবৃত্তিই তার পেশা। লাঠিতে ভর করে ল²ীপুর শহরে ঘুরে বেড়ায় জীবিকার সন্ধানে। চোখে ঠিকমতো না দেখলেও তিন বেলা আহারের খোঁজে প্রতিদিনই বের হয় পথে ঘাটে। পুরোনো পত্রিকার গ্রাহকরা তাঁকে দেখলেই জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেন।

জানা যায়, সৈয়দ আহমেদ ছিলেন কাগজ কলমে অশিক্ষিত কিন্ত তার হৃদয় ছিল আলোকিত। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে চরম দুঃখ কষ্টে। তবুও হৃদয়বান এ মানুষটি শিশুদের পাঠশালার জন্য দান করেছেন পৌরসভার চার শতক জমি। আর মুসল্লিদের জন্য দিয়েছেন মসজিদের জায়গা।

শতবর্ষী সৈয়দ আহম্মদ রোববার সকালে এ প্রতিনিধিকে জানান, বয়স প্রায় ১’শ ১২ বছরের কাছাকাছি। এ বয়সে ভিক্ষার ঝুলি বহন করতে আর পারছেন না। কর্মজীবনের শুরুতে প্রথমে নৌকায় কাজ করতেন। এর পর স্থানীয় এক মাওলানার সহযোগিতায় প্রায় ৮৫ বছর আগে পত্রিকা বিক্রির কাজ শুরু করেন তিনি। সাল-তারিখটা ঠিক মনে করতে পারছিলেন না। তবে ইংরেজ আমলে ভারতীয় পয়গাম পত্রিকা বিক্রি করেছেন। পরে আজাদ, ইত্তেফাক, যুগশঙ্খ আর সংবাদ পত্রিকা বিক্রি করতেন। দুই পয়সা, চার পয়সায় পত্রিকা বিক্রি শুরু করেছিলেন তিনি।

সৈয়দ আহম্মদ আরও জানান, সে সময়ে ছোট এ লক্ষীপুরে সরাসরি পত্রিকা আসতো না। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে রেলগাড়িতে পত্রিকা আসতো। সেখান থেকে বাসে করে লক্ষীপুরে পত্রিকা নিয়ে আসতাম। তারপর তা পাঠকের হাতে পৌঁছে যেত প্রকাশের তিন-চার দিন পরে। প্রতিদিন পত্রিকা পৌঁছে দেয়াও সম্ভব হতো না। তিনি আরো জানান, কিছু সময় ডাকহরকররা পায়ে হেঁটে পত্রিকা পৌঁছে দিত। তখনও সকালবেলার পত্রিকা আসতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। সন্ধ্যার সময় পত্রিকা বিক্রির জন্য বের হতেন তিনি। এভাবে নিজের অজান্তেই পত্রিকার সাথে নিজের জীবনকে পুরো জড়িয়ে নেন সৈয়দ আহমদ। তার পর টানা প্রায় ৮০ বছর পত্রিকা বিক্রির সাথেই ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর থেকে আর পত্রিকা বিক্রি করতে পারছে না। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে পত্রিকা ছেড়ে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেন। টাকার সংকট চোখেন চিকিৎসা করাতে পারছেনা।

অতীতের প্রসঙ্গ তুলতেই সৈয়দ আহমেদ ভূইঁয়া জানান, এ পত্রিকা বিক্রিকালেই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০-এর গণ-আন্দোলনসহ সব ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্বাক্ষী তিনি। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবা কার্যালয়ের সহযোগিতায় নিজের আর স্ত্রীর বয়ষ্কভাতা ভাতার কার্ড করিয়েছেন। দুটি কার্ডের অর্থ ও শতবর্ষী বৃদ্ধ সৈয়দ আহম্মদের ভিক্ষার টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছে।

পত্রিকা এজেন্ট মেসার্স রহমানিয়া প্রেসের পরিচালক রাকিব হোসেন জানান, ছোট বেলা থেকে দেখতাম প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে রহমানিয়া প্রেসে চলে আসতেন সৈয়দ চাচা। মাঝে মাঝে সকালবেলা দোকান খুলতে এসে দেখতাম সৈয়দ কাকা বসে আছেন। প্রায় সময়ই তিনি আমাদের আগেই এসে বসে থাকতেন। অনেক সময় রাত পর্যন্তও তিনি পত্রিকা বিক্রি করতেন। পত্রিকার গাড়ি এসে পৌঁছালেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। শুরু হয় যেতো তাঁর কাজ। কাজের সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হতো না। বর্তমানে ভিক্ষাবৃত্তিতেই সংসার চালাচ্ছেন।

লক্ষীপুর প্রেস ক্লাবের কার্য্য নিবাহী কমিটির সদস্য ও সাংবাদিক মো: রবিউল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান লক্ষীপুর জেলা এর পূর্বের লক্ষীপুর থানার সব সময়ের হাজার ঘটনার স্বাক্ষী ছিল খবরের ফেরিওয়ালা সৈয়দ আহম্মদ। পাঠকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। বাম হাতে একটি লাঠি আর কাঁধে ব্যাগ, পরনে পুরোনো বিবর্ণ শার্ট, লুঙ্গি ডান হাতে পত্রিকা নিয়ে ঘুরে ফিরতেন অলিগলি।

কখনো কখনো লক্ষীপুর শহরের পুলের উপরে বসেও পত্রিকা বিক্রি করতেন তিনি। কিন্ত তাঁর কাঁধে ঝোলানো আছে সে ব্যাগ আর পরনে পুরোনো বিবর্ণ শার্ট, লুঙ্গি ও ডান হাতে লাঠি ও আছে। কিন্ত নেই শুধু পত্রিকা। এখন তার সময় যাচ্ছে কষ্টে। এসময় সমাজের বিত্তবানদের হকার সৈয়দ আহাম্মদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..