নোয়াখালীর হাতিয়ার নলচিরা ঘাট— এটি শুধু একটি সাধারণ নদীপথের ঘাট নয়, বরং হাতিয়ার সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের কারণে ঘাটটির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ঘাটকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী অবৈধ সিন্ডিকেট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যে খালাস করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ তেল, কয়লা, পাথর, লবণ, চিনি, গমসহ নানা ধরনের অবৈধ মালামাল। রাতের আঁধার তো বটেই, দিনের আলোয়ও এসব পণ্য নামানো হয় জাহাজ থেকে। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও কর্তৃপক্ষ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।
সচেতন মহল মনে করে, নলচিরা ঘাটকেন্দ্রিক এই অবৈধ ব্যবসার মূল পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে। একসময় স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গড়ে ওঠে এই সিন্ডিকেট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং এখনো আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই চোরা তেল ও অবৈধ পণ্য খালাসের সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে নাম উঠে এসেছে বাসু মেম্বার, আজিম, সাহেদ, আব্দুর রব মেম্বার, শাহীন মেম্বার, হাছান, রিয়াজ, সাদ্দাম, ইরাক সেরাং, মন্জু সেরাং, আজাদ বাবলু, ফয়েজ, ইব্রাহীম, আকবর, মানসুর, বাবলু ও সাজু’র। এদের পাশাপাশি আরও কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম এলাকায় উচ্চারিত হলেও ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে সচেতন মহলের মনে একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এতবছরেও কেনো এই অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙা হলো না? প্রশাসন কেন এখনো নীরব দর্শকের ভূমিকায়? প্রতিদিন রাষ্ট্রের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ তেল ও মালামাল খালাস হলেও কেন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?
একজন অভিজ্ঞ স্থানীয় ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নলচিরা ঘাট এখন চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তারাই ক্ষমতার জোরে এসব অবৈধ সিন্ডিকেটের হোতা হয়ে বসে আছে। সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।”
এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রের আইন অমান্য করে, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে, দিনের পর দিন প্রকাশ্যে এ ধরনের অবৈধ তেল ও পণ্য খালাসের ব্যবসা চললেও প্রশাসন কার্যত নিশ্চুপ। অনেকেই মনে করেন, কোনো না কোনোভাবে প্রশাসনের নীরব সমর্থন বা আশীর্বাদ ছাড়া এত বড় সিন্ডিকেটের কার্যক্রম এভাবে বহাল তবিয়তে চলতে পারে না।
হাতিয়ার সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন— নলচিরা ঘাটের এই চোরা তেলের সিন্ডিকেট ভাঙবে কবে?
মানুষ জানতে চাইছে, কবে শেষ হবে এই অবৈধ বাণিজ্যের দৌরাত্ম্য? কবে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেবে এবং কবে হাতিয়ার মানুষ মুক্তি পাবে এই চোরা সিন্ডিকেটের কবল থেকে?