শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
আমতলী থানা থেকে জব্দকৃত জাটকা ইলিশ লুট! এমন আলোচিত ঘটনা জানেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসুস্থ সাবেক মেয়রের পাশে মানবিক নেতা: হাসপাতালে সাক্ষাৎ করলেন আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান তাড়াইলে মাদক বিরোধী সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে শুরু হয়েছে ‘বিসিক উদ্যোক্তা মেলা-২০২৫’ নলছিটিতে ইয়ুথ আউটরিচ কমিউনিকেইটার টিম গঠনের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণজাগরণ দল পটুয়াখালী সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন ছাগলে কলমি শাক খাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা — একই পরিবারের চারজন আহত, বরগুনা-১ আসনের মনোনয়নে ক্ষুব্দ আমতলী-তালতলী প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন এমরান চৌধুরী মোরেলগঞ্জে ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক

এক বছরেও মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ শহীদ মিলনের স্ত্রী দিলরুবা

রংপুর ব্যুরো:
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫
  • ৫৭৮৪ বার পঠিত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই গুলিতে রংপুরে ৪ জন নিহত হয়েছিল। এক বছরেও মামলার তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। চার শহীদ পরিবার মধ্যে শহীদ মুসলিম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুরা আক্তারের সাথে কথা হয়।

জানা যায় অনেক তথ্য ও তাদের প্রত্যাশার কথা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে গত বছর ১৯ জুলাই গুলিতে নিহত ম্বর্ণ শ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলনের দাফনের পর তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল যৌথ বাহিনী। স্বজন হারানোর শান্তনা পাওয়া তো দুরের কথা উল্টো ৫ আগস্ট পর্যন্ত পরিবারের সবাই ছিলেন পলাতক। এ কথা জানিয়েছেন গুলিতে নিহত শহীদ মুসলিম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার। শুধু তাই নয় হাসপাতালে লাশও গুম করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

১৯ জুলাই শনিবার মুসলিম উদ্দিন মিলনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এসব কথা বলেন দিলরুবা আক্তার। ঘটনার বিষয়ে দিলরুবা বলেন, আমার স্বামী গত বছর ১৯ জুলাই ছিল শুক্রবার। নামাজ শেষে আড়াইটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মারা যায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে। আসরের নামাজও মসজিদে পড়েছিল। আমার স্বামী আন্দোলনের সামনে ছিল। একটা গুলি লাগে বুক বরাবর। ওখানেই মারা যায়। এরপর দুইটা ছেলে বেতপট্টি হয়ে মারুয়া পট্টির গলি দিয়ে কোনো রকমে মেডিক্যালে নিয়ে যায়। মেডিক্যাল থেকে লাশ নেয়ার দুঃখসহ যন্ত্রনার কথা উল্লেখ করে দিলরুবা বলেন, লাশটা নেওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মকর্তারা আমাদের খুব হেনন্তা করেছে। এখান থেকে ওখানে। দুইতলা, তিনতলা, চারতলা। একেকবার একেক জায়গায় নিয়ে যায়। তারা চেষ্টা করছিল কোনোভাবে লাশটা গুম করা যায় কিনা। যেহেতু আমরা পিছে পিছে ছিলাম। তারা যদি লাশটা রুমে নিতে পারতো। তা হলে লাশটা কিন্তু আমাদের দিতো না। ওরা লাশটাকে গায়েব করে দিতো। আমার পরিবারের লোকজন, আমার ভাতিজা,আমার ভাসুর, আমার ননদরা, আত্মীয় স্বজনরা মিলে প্রায় ৫০ জন লোক আমরা লাশের সাথে ছিলাম। পাহারা দিয়েছি। অনেক চিৎকার করেছি। তারা লাশ দিতে চায় না। আমরা বলেছি লাশ সরালে কারো ভালো হবে না। আমরা তুলকালাম করবো। সবাইকে শেষ করে দিবো। এরকম ভয় দেখানোর পর কোনো রকমে আমাদের লাশটা দেয়। লাশটা দিয়েছে রাত ৯ টায়। লাশ দাফনের চারদিনের মাথায় গভীর রাতে বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযানের বিভিষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে দিলরুবা আক্তার বলেন, আমার স্বামী মারা যায় ১৯ জুলাই।

আর ২৩ জুলাই রাত ২টা আড়াইটার দিকে বিজিবি পুলিশসহ প্রায় ৫০ জন যৌথবাহিনীর লোক পুরো বাড়িটাকে ঘিরে ফেলে। আমার ভাসুর দোতালার ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়। কেউ জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে ধরার জন্যই এসেছিল। তারা অনেক গালাগালি করে। হুমকি দেয়। এসময় তারা একটা নতুন ফোন নিয়ে যায়। তখন থেকে বাড়ির সব পুরুষরা পালিয়ে ছিল। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে ভারতে গেল। তখন তারা পলাতক জীবন ছেড়ে বাড়িতে আসে। মৃত্যুর শোকে শোকাহত আমরা সবাই। সেই শোকের চারদিনের মাথায় তারা আসে আমাদের গ্রেফতার করার জন্য। কি নির্মম ইতিহাস এটা।

আমরা তাদের কাছে গিয়ে এতোবার ফোনটা চেয়েছি। সেটাও দেয়নি তারা। এক বছরেও শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারেনি বর্তমান সরকার উল্লেখ করে দিলরুবা আক্তার বলেন, আমার স্বামী শহীদ হওয়ার দেখতে দেখতে একটি বছর হয়ে গেলো। এখন যারা সরকার বা উপদেষ্টা তারা এই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে এই জায়গাটা পেয়েছেন। তারা ওই চেয়ারে বসে আছেন মানুষের রক্তের বিনিময়ে। উপদেষ্টারা শুধু কথা শুনে যাচ্ছেন। তারা কোনো কথা বাস্তবায়ন করছেন না।

আমরা কি চাই, কি আমাদের চাওয়া। সেটা তো বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বামীকে হারিয়ে এখন সর্বশান্ত উল্লেখ করে দিলরুবা বলেন, আমরা তো সব হারিয়ে এখন সর্বশান্ত। এখন আমরা পথের পথিক। আমাদের কিছুই নেই পৃথিবীতে। সর্বশান্ত আমার পৃথিবী। আমার দুটো ছোট ছোট ছেলে বাচ্চা আছে। বাচ্চাদের মুখ থেকে বাবা ডাকটা কেড়ে নিলো। সারা জীবনের জন্য। তারা এতিম হয়ে গেলো। তাদের দায়িত্ব কে নিবে। সরকারকেই তো নিতে হবে। কিন্তু সরকার এক বছরেও সেটা নেয়নি। নেয়ার কোন আলামতও নাই।

এক বছরে স্বামী হত্যার মামলায় মাত্র দুইজন গ্রেফতার হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে দিলরুবা বলেন, মামলা করেছি। কিন্তু বিচার কোন শহীদ পরিবারই পাইতেছি না। আসামি গ্রেফতার হচ্ছে না। আমরা চাই প্রতিটা আসামি গ্রেফতার হোক। একটা বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও মামলার কোনো সুরাহা নাই। যেখানে একদিন নেয়াও উচিৎ না। সেখানে এক বছর চলে গেলো। মাত্র দুইজন গ্রেফতার হয়েছে আমার মামলায়। এটা মানা যায় না। শহীদ ও আহত পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে দিলরুবা বলেন, আমাদের কথা, আমাদের দাবি, আমাদের প্রত্যেকটা শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাসিক ভাতাটা এখনও চালু করা হয়নি। সেটা একমাস সময় নেয়া উচিৎ নয়। তাদের পরিবারগুলো কিভাবে চলবে। কিখাবে। কিভাবে বাঁচবে।

সেখানে এক বছর হয়ে গেলো ভাতা চালু হলো না। আমরা হতাশ। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। জুলাই সনদ এই মাসেই দিতে হবে দাবি করে দিলরুবা বলেন, একটা শহীদ শুধু আমাদের প্রিয়জন নয়। আাপনজন নয়। তিনি দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য জীবন দিয়েছেন। শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের একটাই কথা। আমাদের জুলাই সনদ দিতে হবে। সরকার যদি মন থেকে শহীদদের ¯িপরিট ধারণ করেন। তা হলে জুলাই সনদ আমাদের অবশ্যই দিবেন। সেটা এ মাসেই দিতে হবে। মুসলিম উদ্দিন মিলন খুনের ঘটনায় গত বছর ২৭ আগস্ট স্ত্রী দিলরুবা আক্তার জাতীয় সংসদের সাবেক শিরীন শারমিন চৌধুরী, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হুসাইন মোহাম্মদ রায়হান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আবু আশরাফ সিদ্দিকী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ স¤পাদক আব্দুল হক প্রামাণিক, আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদাত হোসেন বকুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শফিয়ার রহমান সাফি ও সাবেক সাধারণ স¤পাদক তুষার কান্তি মন্ডলসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।

পরবর্তীতে আদালতের আদেশে মহানগর কোতয়ালি থানা মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে। এক বছরে ওই মামলায় গ্রেফতার হয়েছে মাত্র দুইজন। গত বছর ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে বুক উচিয়ে পুলিশের গুলি বরণ করে শহীদ হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আবু সাঈদ হত্যার দু’দিন পর ১৮ জুলাই রংপুরের মডার্ন মোড়ে আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন অটোচালক মানিক মিয়া। পরে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সিটি বাজারের সামনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে বাধা দেয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। শুরু হয় নির্বিচারে গুলি। প্রাণ হারান কলা ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম, বৌরানী জুয়েলার্সের ম্যানেজার মুসলিম উদ্দিন মিলন, সবজি ব্যবসায়ী সাজ্জাদ ও শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির। গুলিবিদ্ধ হন অনেক মানুষ।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..