ঋণ পরিশোধের ভাবনায় স্ত্রী মোসাঃ সাজেদা বেগম (৫৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন স্বামী তৈয়ব হাওলাদার। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার চাওড়া পাতাকাটা গ্রামে শনিবার রাতে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছে স্বজন ও এলাকাবাসী।
জানাগেছে, উপজেলার চাওড়া পাতাকাটা গ্রামের তৈয়ব আলী হাওলাদার তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের নামে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহন করছেন। ঔ ঋণ পরিশোধে করতে পারছেন না তিনি । ঋণের টাকা আদায়ে এনজিও সংস্থাগুলো তৈয়বের স্ত্রীকে চাপ দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্ধ হয় বলে জানান স্থানীয়রা। স্বামী তৈয়ব হাওলাদারের ধারনা ঋণ গৃহিতা মারা গেলে ঋণ পরিশোধ করতে হয় না। এ ধারনা থেকে শনিবার রাতে তার স্ত্রী সাজেদাকে তিনি পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে তিনি তাকে আমতলী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। ঔ হাসপাতালে তার অবস্থা খারাপ দেখে মেয়ে মরিয়ম বেগমকে মুঠোফোনে তার মাকে মারধরের কথা জানিয়ে তিনি পালিয়ে যান। পরে মেয়েরা হাসপাতালে এসে তার মেয়েকে নিয়ে বরিশাল যাচ্ছিল। পথিমধ্যে আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়।
প্রতিবেশী কয়েকজন বলেন, শনিবার রাত ৯ টার দিকে তৈয়ব হাওলাদার ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে কাঠের ভারী বস্তু দিয়ে সাজেদা বেগমকে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। সাজেদা বেগমেকে ওই দিন রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে প্রেরন করেন। পটুয়াখালী হাসপাতালে যাওয়ার পথে আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের সন্তান মোসাঃ মরিয়ম বেগম বলেন, গতকাল শনিবার রাত ১০ টার দিকে বাবা তৈয়ব হাওলাদার তাকে ফোনে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে বলে। মেয়ে মরিয়ম হাসপাতালে আসার পরে মেয়ের কাছে মা সাজেদা বেগমকে রেখে টাকা আনার কথা বলে বাবা তৈয়ব হাওলাদার পালিয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
তৈয়ব হাওলাদারের বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, প্রতিনিয়তই তৈয়ব ও সাজেদার মধ্যে মারধরের ঘটনা প্রায়ই লেগে থাকত। মুখে কাপড় ঢুকিয়ে মারধর করতো যাতে আশেপাশের মানুষ মারধরের শব্দ শুনতে না পায়। তিনি আরো বলেন, তৈয়ব হাওলাদার তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহন করেছে। ঔ ঋণ পরিশোধ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি ও মারধরের ঘটনা ঘটতো। তিনি আরো বলেন, তৈব হাওলাদার মারধরের সময় প্রায়ই বলতো তোকে মারলেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে না। আমি তাই করবো।
এ বিষয়ে জানতে স্বামী তৈয়ব হাওলাদারের মুঠো ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, গুরুতর জখম সাজেদা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে।
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন পারিবারিক কলহের জের ধরেই স্ত্রীকে পিটিয়ে স্বামী হত্যা করেছে। ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত আছে।