মৌসুমি বায়ু ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণে পটুয়াখালী শহরে দেখা দিয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকেই পৌরসভার অন্তত এক-চতুর্থাংশ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল কমে গেছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে শহরের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রুস্তম মৃধা কালভার্ট ঘিরে সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। এ কালভার্ট দিয়েই শহরের ৪, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ড্রেনেজের পানি সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ে। অথচ বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পৌরসভার তত্ত্বাবধানে এই গুরুত্বপূর্ণ কালভার্টে সংস্কারকাজ শুরু হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সময় বিবেচনা না করেই সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে সংস্কারকাজ শুরুর ফলে ড্রেনের পানি বের হতে না পেরে শহরের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে অসংখ্য ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পটুয়াখালী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নাহিয়ান বলেন, “উন্নয়নের নামে বর্ষাকালে এমন কাজ শুরু করা একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত। এখন আমরা প্রতিদিন জলাবদ্ধতা আর দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এর স্থায়ী সমাধান জরুরি।”
৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবা বেগম বলেন, “সারা বছরই শহরে ড্রেনের কাজ চলে, তারপরও বর্ষাকালে আমাদের ঘর আর উঠান পানিতে ডুবে যায়। ২০ বছর ধরে আমরা একই দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।”
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভার অবহেলা ও দূরদর্শিতার অভাবেই প্রতিবছর একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাদের মতে, পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের বদলে সময়োপযোগী ও জনকল্যাণভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করলেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পৌরসভার পরিদর্শক মুক্তিপথ নন্দী বলেন, “বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই কালভার্ট সংস্কারের কাজ শুরু হয়। আমরা জলাবদ্ধতার বিষয়ে অবগত রয়েছি। বিশেষ করে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে পৌরসভা থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার ও পরিকল্পিত উন্নয়নই কেবল এই সমস্যার টেকসই সমাধান হতে পারে।