শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বাংলাদেশকে মাথা তুলে দাঁড় করানোর রূপরেখা দিয়েছেন তারেক রহমান”— প্রভাষক ফকির রাসেল আল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসা ইউএনওকে রক্ষায় ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে মানববন্ধন কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত সিপিডির ক্লাইমেট উইকে অ্যাওয়ার্ড অর্জন শক্তি ফাউন্ডেশনের রনি-সীমান্ত নেতৃত্বে চুদলিংপং প্রতিবাদ মঞ্চ (চপম) যাত্রা শুরু করলো সরকারি বাঙলা কলেজের সাংবাদিক সমিতির সভাপতির উপর হামলা মোরেলগঞ্জে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আমতলীর ইউএনওর গোপন বৈঠক! নান্দাইলে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও পথসভা অনুষ্ঠিত নীলফামারীর ডোমারে সেবা ক্লিনিক এ সিজারের রোগীর রক্ত ক্ষরণে নারীর মৃত্যু

শান্তি মার্ডির পায়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের স্বপ্নে ভাসছে দেশ

রংপুর ব্যুরো:
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৫৮০৭ বার পঠিত

ভুটানের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব ২০ নারী সাফ চ্যা¤িপয়নশিপে হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশকে ৪-১ গোলের জয় এনে দিয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের আদিবাসী পরিবারের কন্যা শান্তি মার্ডি।

গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে আসা শান্তি মার্ডির অসাধারণ ক্রীড়া নৈপূন্য দক্ষতায় মুগ্ধ সারা দেশ। শান্তি মার্ডিদের এই ধারাবাহিক সাফল্যে প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়ে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা। এটি নতুন ইতিহাস। এটি গৌরবের গল্প।

বাংলাদেশের মেয়েরা দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা দেশের জন্য মাঠে নামে ইতিহাসের পাতায় কিভাবে নাম লেখা যায়। দুর্দান্ত নৈপুণ্যে শান্তি মার্ডির তিনটি গোল শুধু একটি ম্যাচ জয়ের গল্প নয়,এটি বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ভবিষ্যতের স্বপ্নের পথচলা।

শান্তি মার্ডির এই অর্জন প্রমাণ করে, প্রতিভা সুযোগ পেলে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা জয় করে বিশ্বমঞ্চেও নিজেকে তুলে ধরতে পারে। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন শান্তি মার্ডি। অসাধারণ ছন্দে খেলে একাই তিন গোল করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন।

এই সাফল্যে দেশের মানুষের পাশাপাশি উৎসবে মেতে উঠেছে শান্তি মার্ডির গ্রাম দক্ষিণ পলাশবাড়ী। শান্তি মার্ডির কৃতিত্বে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল আর নাচ-গানে মুখর হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষ। বিজয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ে তাদের জীর্ণ কুটিরে। শান্তি মার্ডি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে। তার বাবা বাবু লাল মার্ডি পেশায় একজন কৃষক। মা সুকুমনি মুরমু একজন গৃহিণী। পরিবারের দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে শান্তি মার্ডি দ্বিতীয়। শান্তি মার্ডি দক্ষিণ পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর্থিক অনটনের মাঝেও ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিল শান্তি মার্ডির প্রবল টান। গ্রামের মাঠে খেলা শুরু করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নেন জাতীয় অনূর্ধ্ব ২০ নারী দলে।

এখন পর্যন্ত স্থানীয় ও জাতীয় ভাবে খেলাধুলায় অর্ধ শতাধিক পুরুস্কার অর্জনের সৌভাগ্য হয়েছে তার। ২০১৭ সালে দক্ষিণ পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালে আন্তঃপ্রাথমিক নারী ফুটবলে বীরগঞ্জ উপজেলার হয়ে চ্যা¤িপয়ন হন শান্তি মার্ডি।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীন ও স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক মো. নাজিরুল ইসলাম নাজিরের অনুপ্রেরণায় শুরু হয় শান্তি মার্ডির নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বাপ্ন। তবে দারিদ্রতার মাঝেও নানা প্রতিবন্ধকতা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেতে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে হয়। এই কঠিন সময়ে সহায়তা করেন বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। তার প্রচেষ্টায়ই শান্তি মার্ডির পথচলার সোনালি অধ্যায় সূচিত হয়।

শান্তি মার্ডি বাংলাদেশের ফুটবলে নারী দলের নেতৃত্বে দেওয়ার আশা ব্যক্ত করে বাবা বাবু লাল মার্ডি বলেন, আমার মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এটা আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আগামী দিনে যেন দেশের সম্মান আরও উজ্জ্বল করে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। স্বল্প আয়ের সংসারে অভাব অনটন থাকলেও মেয়ের খেলার ব্যাপারে কার্পন্য করেননি। তবে বাড়ী টিভি না থাকায় মেয়ের পুরো খেলা দেখতে না পারায় খুব খারাপ লেগেছে তাদের। মেয়ের সাফল্যে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন মা সুকুমনি মুরমু।

স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক নাজিরুল ইসলাম বলেন, শান্তি মার্ডি এখন কেবল একজন ফুটবলার নন তিনি সাহস, সংগ্রাম আর স্বপ্নের নাম। তবে মানসম্মত খেলোয়ার তৈরিতে প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা। নারী ফুটবলের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় সাফল্য অর্জন করবে।

উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী (শাহিন) বলেন, শান্তি মার্ডির এই অর্জন শুধু তার নয়, পুরো এলাকার গর্ব। এমন প্রতিকূলতার মাঝেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে তুলে ধরা যায় শান্তি মার্ডি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, শান্তি মার্ডিদের অর্জন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সম্মানিত করেছে।

পাশাপাশি এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা তার এই অর্জনে আমরা গর্বিত। তার ক্রীড়া নৈপূন্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে যে কোন প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির পাশে থাকবে। প্রশাসন শান্তি মার্ডিকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..