হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শাস্তি পাচ্ছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এসব হামলার তদন্তে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সুপারিশ করা ১০২জনের শাস্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি যাঁদের সুপারিশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ স¤পাদক এম এম মাসুদ রানা মিঠু, সহসভাপতি চন্দন বর্মণ, শুভ নিয়োগী, রাফসান জানি, শাহ পরান, ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা মোরশেদুল আলম রনি, ধনঞ্জয় ভৌমিক জয়, কাওসার, সজল, শুভ, উত্তম কুমার পাল, আতিকুর রহমান, মেহেদী হাসান, লিরা আক্তার, মনিরুজ্জামান, আল আমিন, এস তাফসীরুল-ই-আব্বাসী, আনিছুজ্জামান, বখতিয়ার ফাহিম।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলন দমনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে আন্দোলনে জড়িত অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। এসময় হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে হলগুলোয় ব্যাপক অস্ত্র মজুত করে। ৫ আগস্টের পর সেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অপরাধের ধরন বিবেচনা করে দুই ক্যাটাগরিতে ২টি তালিকা প্রস্তুত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি সূত্রে জানা যায়, একটি তালিকায় নাম রয়েছে ৮৫ জন শিক্ষার্থীর।
আরেকটি তালিকায় নাম রয়েছে ১৭ জনের। দুই তালিকায় থাকা ১০২ জনই শাস্তি পেতে যাচ্ছেন। কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে অপরাধের ধরন বিবেচনায় সনদপত্র বাতিল, সনদপত্র স্থগিত, আজীবন বহিষ্কার, ২বা ৩ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, রাষ্ট্রীয় আইনে মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের সাজা সুপারিশ করেছে। ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের তালিকা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৫৯তম সভায় উত্থাপন করা হয়।
পরে বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁদের সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাবিপ্রবির আবাসন ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যসচিব ও প্রক্টর মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থী যেন এ ধরনের ঘৃণ্য কাজে না জড়ান, এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেটি বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তির অনুমোদন দিয়েছেন।
অবিলম্বে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে। দিনাজপুর হাবিপ্রবির নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, আবাসন ও শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশমালার আলোকে গত রিজেন্ট বোর্ডে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে চিঠি প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের চিঠি দেওয়ার পর সেই চিঠির জবাব এলে তা যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে কার কার বিরুদ্ধে মামলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই মামলা করা হবে।