শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক তথ্য চেয়ে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : আজাদ মজুমদার পার্বত্য উপদেষ্টার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ চার বিদেশি প্রতিনিধির সাক্ষাৎ নান্দাইলে যুগের হাওরে পুলিশ ডিউটি বক্সটি সংস্কার চায় এলাকাবাসী প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান চায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র তাড়াইলে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু মুরাদনগরে এসএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহে যুবকের কারাদন্ড

পুলিশ ভাবনা: নগরায়ন: এস.এম.আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ

এস.এম আক্তারুজ্জামান: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৫৯৩৭ বার পঠিত
এস.এম আক্তারুজ্জামান: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)
পুলিশের চাকরিতে কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা তাদেরকে ভিন্ন আর্থ-সামাজিক রুপ দেয়। যেমন:
১। পুলিশ তার নিজ জেলায় চাকরি করতে পারেনা, এটা জেলা পুলিশের জন্য প্রযোজ্য। তবে, মেট্রোপলিটন এবং বিশেষায়িত পুলিশে সম্ভব। তাই, দেখা যায় জেলা পুলিশে জনবলের ঘাটতি, বদলি জনিত শুন্যতা। অন্যদিকে অন্য ইউনিটে জনবলের তুল্নামুলক আধিক্য। উদাহরন: পুলিশ একাডেমি সারদাতে সারদার লোকজন তাদের বাপের বাড়িতে থেকে চাকরি করার সুযোগ পায়। সবচেয়ে সুখী পুলিশ তারা।প্রাপ্যতার চেয়ে অনেক বেশি জনবল সারদা’য়।
২। পুলিশের চাকরিতে ঝুকি অনেক বেশি। পুলিশের বিভাগীয় শাস্তি এবং শাস্তিমুলক বদলি খুব কমন আতংক, বিশেষ করে জুনিয়র পর্যায়ে। যখন তখন যে কোন পচা শামুকে পুলিশের হাত-পা কেটে যায়, এসব শামুক ডিটেক্ট করা সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতেও সম্ভব নয়।
৩। পুলিশ পরিবারকে সবচেয়ে কম সময় দেয়। তাদের সাধারন ছুটিও ছুটি না, অনুমতি ছুটি নিয়ে পরিবারের কাছে যেতে হয়।
৪। পুলিশের চাকরিতে থাকে পেশাগত চাপ এবং দুষন; এবং অনিয়মিত জীবন এবং আহার যার জন্য তারা ৪০ বছর বয়স পার হতে না হতেই নানান রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। আরো বৈশিষ্ট্য আছে, তা উল্লেখ না করলাম। তাই পুলিশ জানা এবং অজানা অনেক অনিরাপত্তা এবং শুন্যতা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়। হয়ে যায় এক দুরন্ত যাযাবর।
বলতে পারেন, তাহলে “মাছের রাজা ইলিশ আর চাকরির রাজা পুলিশ” কেন?
প্রথমেই পুলিশ সাধারন থেকে আলাদা, মানে অসাধারন না হলেও ব্যাতিক্রম। গায়ে পোষাক, হাতে লাঠি, কোমড়ে অস্র এবং আচরনে কেমন জানি একটা ভাব। আর মানুষ ব্যাতিক্রম ভালবাসে।
আর, আমাদের সমাজে অনেক আইন-কানুন থাকলেও তার কমপ্লায়েন্স খুব কম, আদেশ-উপদেশ থাকলেও তার প্রতি আনুগত্য খুব খুব কম। তাই, মানুষ মনে করেন বা প্রত্যাশা করেন পুলিশ বল প্রয়োগে আইন প্রয়োগ করুক। অর্থাত, ট্রাফিক সিগনাল কেউ মানবেনা, পুলিশ রাস্তায় দাড়িয়ে ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করুক। তাই, সবাই পুলিশ হতে চায় বা পুলিশের কাজ করতে চায়। এছাড়া পুলিশের উচ্চতা, গ্ল্যামার একটু বেশি থাকে।
পুলিশ তাদের গ্ল্যামার ধরে রাখতে এবং অনিরাপত্তা দুর করতে তারা যেখানে চাকরি করে সেখানের শহরে, বিভাগীয় শহরে, নগরে জমি কিনে এবং আস্তে আস্তে ইট গাথা শুরু করে। আর পুলিশ যেখানে জমি কিনে সেখানে অন্যরাও কিনে। তাতে ওখানে জমির মূল্য বাড়তে থাকে। আর শেয়ার ব্যাবসার মত ফেসভ্যালু বাড়তেই থাকে। এতে পুলিশের জমি হয়ে যায় মুল্যবান এবং গড়ে উঠে নগর। অনেক শহরের গোরাপত্তন হয়েছে পুলিশের বাড়ি, থানা, পুলিশ লাইনকে কেন্দ্র করে।
পুলিশ জমি কিনে বাড়ি করে নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত করে, তাদেরকে সময় দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে, গ্ল্যমার ধরে রাখে।অনেকে মনে করতে পারেন পুলিশ দুর্নীতি করে এসব করে। আমি দুর্নীতি কতটুকু করেছে বা না করেছে তা নিয়ে কথা বলব না, বলছি তাদের বিনিয়োগ চিন্তা নিয়ে।
তবে, এই বিনিয়োগের সাইড ইফেক্ট আছে। পুলিশের ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের আদর, স্নেহ, শাসন কম পায়, চাকরিতে পিছিয়ে পড়ে। মানুষ কম হয়। জমি কিনতে, বাড়ি করতে লোন করতে হয়, অনেক পরিশ্রম এবং ধান্দা করতে হয়। একজন পুলিশের ভাই বা বোন সরকারি চাকরি করার সম্ভাবনা ৬০% কিন্তু তাদের ছেলে মেয়ের খেত্রে ১০% এর কম। অর্থাৎ, পুলিশ তাদের ভাই-বোন’কে দেয় চাকরি, আর ছেলেমেয়েদেরকে দেয় জমি/বাড়ি।

তাই, পুলিশের নগরায়ণ প্রক্রিয়া অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বেগবান করলেও তাদের পরবর্তী বংশধর সেবা খাত থেকে হয় বঞ্চিত। তাই পুলিশের প্রতি রইল সমব্যাদনা এবং অভিনন্দন।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..