সম্প্রতি যুদ্ধ বিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে আবারো গাজাজুরে নৃশংস হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। বিগত কয়েকদিন যাবত গাজার বেশ কিছু জায়গায় অগণিত গোলা ও ও বোমা হামলায় নিহত হয়েছে অগণিত মানুষ এছাড়াও ধ্বংস করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ও লোকালয়।গাজা জুড়ে চলা এই তান্ডব ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ফিলিস্তানবাসী 7 এপ্রিল ওয়ার্ল্ড স্ট্রাইক এর ডাক দিয়েছে।
ফিলিস্থানের এই আহবানে সাড়া দিয়ে আজ ৭ই এপ্রিল রোজ সোমবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ, কোথাও পালিত হয়েছে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন।
এরই অংশ হিসেবে সাভার রাজাশন ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে আজ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এই মানববন্ধনে হত্যার বিচার, আমেরিকার হস্তক্ষেপ বন্ধ, ইসরাইলি পণ্য বয়কট এবং গণহত্যা বন্ধের দাবি সহ আরো বেশ কিছু দাবি উঠে এসেছে।
রাজাশন ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন শুধুই মানববন্ধন আর প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। ফিলিস্তান সংকটের মত মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য সংকট সমাধান করতে হলে বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুসলিম দেশগুলোর মাঝে উপযুক্ত ঐক্য থাকলে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রদান করা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত উপাধ্যক্ষ জনাব আব্দুর রব সুমন বলেন, গাজায় চলমান এই গণহত্যার জন্য শুধুই দখলদার ইসরাইলি বাহিনী নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাম্প প্রশাসনও সমান নিন্দার ভাগীদার। তারা বরাবরই মানবিক অধিকার ও শান্তির বার্তা দিলেও ফিলিস্থানে গণহত্যা ও যুদ্ধকে তারা পোষণ করে এসেছে। গণহত্যা চালানোর প্রয়োজনীয় রসদ, অর্থ, সমর্থন ও কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে তারা নিজেরাই মানবাধিকার ক্ষুন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অন্যায় হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন দখলমুক্ত করে ফিলিস্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও হস্তক্ষেপ বন্ধ করার কোন বিকল্প নেই।
গণহত্যার উপযুক্ত বিচার দাবি করে অন্য আরেক শিক্ষক বলেন, মুসলিম বিশ্বে শুধুই ঐক্য ও সংহতি নয় বরং অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সামরিকশক্তিস সকল সেক্টরে মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে যেতে হবে। ইজরায়েল এ ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতি সাধন করেছে বলেই তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থন পাচ্ছে এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। জনসংখ্যায় বেশি হয়েও মুসলিম বিশ্ব বারংবার শোষিত, নির্যাতিত হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হলো আমাদের ঐক্যের অভাব এবং বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় অগ্রগতির অভাব রয়েছে। এ বিষয়গুলো সম্পর্কেও আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করা জরুরী।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেও উঠে এসেছে ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ। শিক্ষার্থীরা ইজরাইলি পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তাদের পণ্য ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদেরকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছি বলেই এই অর্থই তারা যুদ্ধের অস্ত্র কিনতে ব্যবহার করছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট কোন বার্তা না আসায় রাজাশন ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক ঘন্টার বিদ্যালয় কার্যক্রম বন্ধ রেখে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
এছাড়াও সাভারের বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আপামর শিক্ষার্থীরা আজ ফিলিস্তানের পক্ষে ইজরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে এটি সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশ বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা। আমেরিকান ও ইসরাইলি পণ্য বয়কট, কূটনৈতিক চাপ প্রদান, জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয়তার প্রতি নিন্দা, মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ও গণহত্যার বিচার প্রার্থনা সহ আরো বহুমুখী দাবি উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে।