বরগুনা জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার রাতে বরগুনা সদর থাকায় মামলাটি দায়ের করেছেন বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম এস এম নজরুল ইসলামের ছেলে এস এস নাঈমুল ইসলাম। মামলায় ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ।
মামলায় মোট ১৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রয়েছেন। তার নাম মো. সোহাগ মৃধা। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ মামলায় মো. সোহাগ মৃধাকে আসামি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, তার ছেলে সুনাম দেবনাথ, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, তার ছেলে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মৃধা, তার ছেলে মারুফ মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার, বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম লিটু, বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র গোলাম কবির,বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান প্রমুখ।
এদিকে, এ মামলায় একটি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সোহাগ মৃধাকে অভিযুক্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এক ফেসবুক পোস্টে জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘সোহাগ মৃধা বিএনপি পরিবারের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। সোহাগের নামে বিএনপি অফিস ভাঙচুরের এ মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
সাগর জোমাদ্দার নামে এক বিএনপি কর্মী লিখেছেন, ‘বরগুনা সদর ৮ নং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সোহাগ মৃধার নাম মামলায় দিয়েছে ১৭ বছরের স্বৈরাচারের দালালেরা। সাবধান হয়ে যাও দালাল।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা জেলা আওয়ামী লীগের অফিস কার্যালয়ে কেক কেটে শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করেন। পরে সেখান থেকে সবাই একত্রিত হয়ে লোহার রড, জিআই পাইপ, বগি দাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে বরগুনায় বিএনপিকে উৎখাত করতে মিছিল সহকারে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। পরে অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করেন তারা। এ সময় অফিসের মধ্যে থাকা বিভিন্ন আসবাব পত্র, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল মালামাল ভাঙচুর করে অফিস সংলগ্ন সামনের সড়কে স্তূপ করে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন অভিযুক্তরা। এছাড়াও সড়কে রাখা বিএনপি নেতাকর্মীদের কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত আসামিরা স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট হওয়ায় তাহাদের বিরুদ্ধে ঘটনার ওই সময়ে কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। গত ৫ আগস্টের পর দেশের পেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় বিচারের দাবিতেই এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে গত ৫ আগষ্টের পর জেলা বিএনপির অফিসকে আবারও নতুন করে মেরামত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১৫৮ জন নেতাকর্মীর নামে সদর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্যে গতকাল রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।