সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের বাজেট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা চোখেমুখে হতাশার ছাপ নিয়ে ভয়ে বাড়ি ছাড়ছে মানুষ দাওয়াত ছাড়াই বিয়ে বাড়ীতে উপস্থিত হন ইউএনও বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বামনায় অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ নিউজ প্রকাশের পর উদ্ধার হলো মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চুরি হওয়া মালামাল তালতলীর বড়পাড়ায় প্রবাসীর বাড়িতে ভয়াবহ ডাকাতি রংপুরে জুলাই ৩৬ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন বেতাগীতে ছাত্রদল ও যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা, গ্রেফতার ১ সৌন্দর্য হারাচ্ছে রংপুরের বেতানি বিল

চোখেমুখে হতাশার ছাপ নিয়ে ভয়ে বাড়ি ছাড়ছে মানুষ

রিপোর্টারের নাম
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৫৭৫৩ বার পঠিত
ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লীর অনেকে ভয়ে তাদের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবু স্থানীয় লোকজনের ভয় কাটছে না। ফলে তারা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছে। গ্রামটিসহ আশপাশের লোকজনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। ২৮ জুলাই সোমবার দেখা যায়, তারা তাদের গরু-ছাগল ও বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র অন্যত্রে সরিয়ে নিচ্ছে।

শংকর রায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, শুনতে পারলাম, আজকেও তারা নাকি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালাবে। এ জন্য গরু-ছাগলগুলো নিয়ে আমার এক দিদির বাসায় রাখতে যাচ্ছি। আরও বেশি ভয় লাগতেছে। পুলিশের সামনে আমাদের ঘরবাড়িগুলো ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। যদি আবার আগুন দেয়, তাহলে তো কিছুই পাব না। এ জন্য আগেভাগে সবকিছু সরিয়ে নিচ্ছে সবাই। ক্ষতিগ্রস্ত মালিক নারায়ণ মহন্ত বলেন, যে অপরাধ করেছে, তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। একজনের অপরাধের দায়ভার কেন আমাদের পুরো গ্রামবাসীর ওপর দেওয়া হলো? আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে খাই, অনেক কষ্ট করে বাড়িটি সাজিয়েছি। তারা মানববন্ধন ও মিছিল করবে বলে এসে পুলিশের সামনে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। এসময় পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে, তারা ভয়ে সামনে আসেনি। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর এত অত্যাচার কেন।

আমরা চাই, এর সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একটু আগে শুনলাম, তারা নাকি আবারও আমাদের গ্রামে অগ্নিসংযোগ চালাবে, তাই ভয়ে লুটপাট হয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট জিনিসপত্র আত্মীয়ের বাড়িতে রাখতে যাচ্ছি। সংকর রায় ও নারায়ণ মহন্তই নন, ওই গ্রামসহ আশপাশের প্রায় ১০০ পরিবার ভয়ে বাড়ি ছাড়ছে। তাদের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ।

সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু। এসময় তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রাখছি, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। এ দেশ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের, আমরা চাই না দেশে এ ধরনের উগ্রপন্থী লোকজন থাকুক। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রাখব, তারা যেন দুষ্কৃতকারীদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। এর আগে শনিবার ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে তাঁকে আটকের পর গত রবিবার গ্রেফতার দেখানো হয়। এদিকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পাশের এলাকা থেকে লোকজন এসে এক দফায় ওই যুবকের বাড়ি মনে করে অন্য ব্যক্তির বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। আরেক দফায় হিন্দুপল্লীতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এতে প্রায় ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এ ঘটনার পর আতঙ্কে প্রায় ৫০টি পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

গত রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান বলেন, ভাংচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, যাতে আর কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য শুকনো খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য টিনের ব্যবস্থা করেছি।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..