সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার ঘটনা কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলদাতপুর ছয়আনি এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়িতে হামলার ঘটনায় ১৬ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গরু-ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুট, বসতবাড়িতে ভাঙচুরে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙচুর করা বাড়িঘর মেরামতে কাজ করছে প্রশাসন।
এঘটনায় করা মামলায় আদালতে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে ওই ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১হাজার ২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি আলদাতপুর ছায়আনিপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি বাড়িতে হামলা করে। সেখানে বসবাসকারী ২২টি পরিবারের টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, পানির পাম্পসহ প্রায় ১১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭০০ টাকার জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া বসতবাড়ির দরজা-জানালায় ব্যাপক ভাঙচুর করায় প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গত মঙ্গলবার ছয়আনি গ্রামের ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাতেই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে বুধবার কারাগারে প্রেরণ করেছে। তাঁদের রিমান্ড শুনানি হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সব ঘরবাড়ি, ফার্নিচার আমরা মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। ২০টি মাটির চুলা, চারটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছি, শুকনো খাবার দিয়েছি। থালা-বাসন প্লেট ক্রয় করে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে পরিবারগুলোকে আরও সহায়তা করা হবে। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.) কে কটূক্তি করে আলদাতপুর ছয়আনি গ্রামের এক হিন্দু কিশোর পোস্ট দেয়। বিষয়টি ভাইরাল হলে স্থানীয় মুসলিম জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তারপরেও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। প্রথমে একটি মিছিল কিশোরের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। রাত ১০টার দিকে তার এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন রবিবার দুপুরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দিয়ে কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে কিশোর পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর ওই দিনই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগেরগাড়ি পারেরহাট, বাংলাবাজার, মাগুরা ও গঙ্গাচড়া থানা এলাকার খলেয়া, বেতগাড়ীসহ অন্যান্য এলাকার জনতা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কটূক্তিকারীর ফাঁসির দাবিতে মিছিল বের করে। শেষে হিন্দুপল্লীর বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়।