শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫৭৫০ বার পঠিত
নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ....................................ছবি: সংগৃহীত

টানা বৃষ্টির অজুহাতে লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। চাল, সবজি, ডিম, মসলা থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। চালের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে। বেশিরভাগ বাজারে এখন ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সংকট তৈরি হয়েছে। বাজারে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে, যা সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া। বিক্রেতারা জানিয়েছেন বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৮ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। বর্তমানে সবজির বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কাঁকরোল, বেগুন, আলু, লাউ, ঝিঙ্গা, দুই ধরনের পটোল, চিচিঙ্গা, গাজর, টমেটো, করলা, কচুর লতি, পেঁপে, বরবটি, কচুর মুখিসহ বেশ কিছু সবজি। তবে দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। এক কেজি বেগুনের দাম মান ও প্রকারভেদে ৮০-১০০, ঝিঙ্গা ৯০-১০০, কাঁকরোল ৮০-৯০, বরবটি ১০০-১২০, গাজর ১৪০-১৫০, করলা ৭০-৯০ টাকা। এ ছাড়া পেঁপে ৪০-৪৫, সাধারণ মানের আলু ২৫-৩০ এবং কচুর মুখি ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা করে, যা ছিল ১২০ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫৫ টাকা কেজি, যা ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে কোথাও কোথাও ২০ টাকায় নেমেছে। ভালো মানের প্রতি কেজি আলু কিনতে ২৫-৩০ টাকা লাগছে।

অস্থিরতা তৈরি হয়েছে মসলা ও তেলের বাজারেও। সয়াবিন তেল (লুজ) বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৭২ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬২ টাকা। পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দামও বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ১১ টাকা করে। খোলা ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০-৫৫ টাকা।

মুরগির বাজারেও রয়েছে অস্বস্তি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা সপ্তাহখানেক আগেও ১৪৫-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। পাকিস্তানি মুরগি ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা দামে। এদিকে, গত এক সপ্তাহে ফার্মের ডিমের দামও বেড়েছে। যেখানে এক সপ্তাহ আগে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২৫-১৩০ টাকা, সেখানে এখন তা বেড়ে ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের মধ্যে ইলিশের দাম অনেক আগেই বেড়ে সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অথচ এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা কেজি। এই দামে ৫০ কেজি চাল কেনা যায়। এ ছাড়া ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ার কারণে মানুষের ভিড় কিছুটা বেশি, তাই বিক্রেতারা অন্যান্য মাছের দামও চাইছেন বেশি।

চড়া চালের দামে নিম্নমুখী কোনো প্রবণতা নেই। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজির রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া বাকি সব চালের দাম সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এ সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..