শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৮ অপরাহ্ন

রংপুরে নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

রংপুর ব্যুরো:
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫৭৫১ বার পঠিত
রংপুরে নদী ভাঙন..............................ছবি: সংগৃহীত

রংপুরে নদী ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ। বাপ-দাদার ভিটামাটি হারিয়ে খোলা অকাশের নীচে মানবেতন জীবন যাপন করছে তারা। শেষ সম্বল ভিটাবাড়ী হারিয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়ীতে আবার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের রাস্তায়। কেউ রয়েছে খোলা আকাশের নীচে।

অনেকেই তরিঘড়ি করে সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ী। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হয়েছে পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা পাড়ের মানুষ।

পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের পানিয়ালঘাটের বাসিন্দা গোলেজা বেগম বলেন. সবাই খালি ছবি তুলে নিয়ে যায়, কেউ সাহায্য দেয় না। আমরা গরিব মানুষ, তিস্তার ভাঙনে ঘর ভেঙেছে, এখনো কোনো সাহায্য পাইনি। তিনি আরও বলেন, তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়ে তার বাড়ী ৬-৭ বার ভেঙেছে। গাছপালা, জমিজমা সব নদীতে চলে গেছে।

এখন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস তার। পীরগাছা উপজেলার পানিয়ালঘাট এলাকায় গত ১০ থেকে ১৫ দিনে তিস্তার ভাঙনে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫টি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। অনেক পরিবার এখনো সাহায্য পাননি। আনছার আলী বলেন,জীবনে বহুবার নদীভাঙনের কারণে ঘর সরাতে হয়েছে। এখন নদী ভাঙছে, আর জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলা হলে ভাঙন কম হতো। এখন এসব পানিতে চলে যাবে, কোনো কাজ হবে না।

ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ৫৫টি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য পরিবারের তালিকা তৈরি করে শিগগিরই সহায়তা দেওয়া হবে। পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সহযোগিতার প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

অপরদিকে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নদীর ভাটিতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।

উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব, হরিচরণ শর্মা, হয়বতখা, বিশ্বনাথ ও হাজীটারী গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় একশত একর ফসলি জমি তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের ফলে ফসলি জমির ধানের চারাগুলো কর্তন করে গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজমল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলন, গত দুই বছর আগেও নদী ছিল অনেক দূরে। পরিকল্পিতভাবে নদী শাসন না করায় প্রতি বছর নদী ভাঙনে এলাকার ফসলি জমি, বাগান, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে।

নদী ক্রমাগত ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির কাছাকাছি এসেছে। মিজানুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, যেভাবে নদীর ভাঙন দেখা যাচ্ছে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এলাকার যারা কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে।

টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, রাজিব, হরিচরণ শর্মা, হয়বতখা, বিশ্বনাথ গ্রামে তিস্তার ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। ভাঙন এলাকার ৪-৫ হাজার জিওব্যাগ চেয়ে আবেদন করা হলেও বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ২৫০টি জিও ব্যাগ। ভাঙন বন্ধ না করলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। গত ৬ মাসে প্রায় শতাধিক একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..