শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
আমতলী থানা থেকে জব্দকৃত জাটকা ইলিশ লুট! এমন আলোচিত ঘটনা জানেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসুস্থ সাবেক মেয়রের পাশে মানবিক নেতা: হাসপাতালে সাক্ষাৎ করলেন আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান তাড়াইলে মাদক বিরোধী সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে শুরু হয়েছে ‘বিসিক উদ্যোক্তা মেলা-২০২৫’ নলছিটিতে ইয়ুথ আউটরিচ কমিউনিকেইটার টিম গঠনের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণজাগরণ দল পটুয়াখালী সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন ছাগলে কলমি শাক খাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলা — একই পরিবারের চারজন আহত, বরগুনা-১ আসনের মনোনয়নে ক্ষুব্দ আমতলী-তালতলী প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন এমরান চৌধুরী মোরেলগঞ্জে ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক

তিস্তার পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে

রংপুর ব্যুরো:
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫৭৮৬ বার পঠিত
তিস্তার পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ......................ছবি: সংগৃহীত

হু হু করে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়েছে নদী তীরে। ঢেউয়ের ধাক্কায় ধসে পড়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর পশ্চিম তীরে নির্মিত সেতু রক্ষা বাঁধের (দ্বিতীয় সড়ক সেতু) ৬০ মিটার এলাকা। তাছাড়া গত কয়েকদিন ধরে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কসহ পার্শ্ববর্তী হাজারের বেশি পরিবারের বসতবাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতে হু হু করে পানি বাড়ছে তিস্তার বুকে। এতে তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ সেতু রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে আঘাত হানছে তীব্র স্রোতের ধাক্কা। বাঁধের নিচের মাটি ধুয়ে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে পুরো বাঁধ ভেঙে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে প্লাবিত হতে পারে আশপাশের এলাকা।

মহিপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুই বারের বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার নদীতে পানি আসা মাত্রই বাঁধের ৬০ মিটার জায়গা ধসে গিয়ে বিশাল গর্ত হয়েছে। এতে তিন গ্রামের প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবার ও সেতুটি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো উদ্যোগ দেখিনি। সবকিছু বিলীন হওয়ার পর তারা পরিদর্শনে আসে। এর আগে ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তার ওপর দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুটি রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে। কিন্তু বর্তমান ভাঙন যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তবে সেতু ও সংলগ্ন সড়ক মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, এর আগে দুইবার বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও তীব্র স্রোতে বাঁধে আঘাত লাগছে, উজানে আরও বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তখন পানি সরাসরি লালমনিরহাপ-রংপুর সড়কে আঘাত করবে, যা ভেঙে গেলে ৩০ লক্ষ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। পাশাপাশি তিনটি গ্রামের অন্তত দেড় হাজার পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।

গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের বিনবিনা, শখের বাজার, খলাইর চর, মটুকপুর, আবুলিয়া, চিলাখাল এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় এসব এলাকার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৫২.২৬ মিটার রেকর্ড করা হয়, যা বিপৎসীমা (৫২.১৫ মিটার) এর চেয়ে ১১ সেন্টিমিটার বেশি। এরপর সকাল ৯টার দিকে পানি আরও বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। তিনি আরও বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখনো স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮-১০টি চর এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, আদিতমারীর চর গোবর্ধন ও মহিষখোঁচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার পরিবার গবাদি পশু ও শিশুদের নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারীর ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকায় তীব্র ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ, সোলার প্যানেল স্থাপনের কারণে তিস্তার স্রোতের দিক পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ের রাস্তার ওপর চাপ পড়ছে। ভাঙন রোধ করা না গেলে কালীগঞ্জ শহরে পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ বেড়েছে। বাঁধ ভেঙে গেলে হাজারো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে। মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, এই মৌসুমেই আমরা তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছি। গবাদিপশু ও শিশু নিয়ে খুবই বিপদে আছি। হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, ফসল, রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোছত বলেন, সেখানে তিন হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচএম রাকিব হায়দার বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুর্গতদের সহায়তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, নিম্নাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..