বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
নান্দাইলে যুগের হাওরে সেই স্থানে সতর্কবাণী সাইনবোর্ড দিলেন উপজেলা প্রশাসন এলডিসি উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে স্পষ্ট হবে সরকার কতটুকু সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে : প্রেস সচিব দুমকিতে প্রবাসীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকিয়ার ফাঁদে জড়িয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আড়াইহাজারে সামাজিক নিরাপত্তা ও মাদক প্রতিরোধে করনীয় শীর্ষক আলোচনা ও সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত নান্দাইলে উৎসবমুখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন ॥ সরকারি বাঙলা কলেজে বাংলা নববর্ষ উদযাপন তাড়াইল প্রশাসনের উদ্যোগে ঝাকজমকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন মনোহরদীতে পঞ্চাশকুড় দাখিল মাদ্রাসার সুপারকে লাঞ্চিত: থানায় অভিযোগ সাভারে ব্যাক টু ব্যাক ছিনতাই

ভোলায় নারীদের হাতের তৈরি দড়ির পণ্য যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৫৮৯৪ বার পঠিত

ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের হাতে তৈরি হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বানানো পণ্য যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

সদর উপজেলা, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার নারী বর্তমানে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে দড়ি তৈরি করে। রাজধানী ঢাকার একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসব দড়ি দিয়ে অন্যান্য উপকরণের সহায়তায় ঝুড়ি, বসার মোড়া, পাপোশ, মাদুর, ফ্লোর ম্যাট, ফুলদানি, সোফা সেট, নারীদের হাত ব্যাগ, সৌন্দর্যবর্ধনের নানান সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুত করে বিদেশে রপ্তানি করছে।

ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালি, হংকং, জাপান, চীন, ভারত, জার্মানিসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য পাঠানো হয়। সংসারের কাজের পাশাপাশি দড়ি তৈরির বাড়তি আয়ে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে এসব নারীর পরিবারে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও দড়ি তৈরিতে নারীদের সহায়তা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ২৪ বছর আগে বিডি ক্রিয়েশন নামে ঢাকার একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভোলায় শুরু হয় হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরির কাজ। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পাওয়া গেলেও বর্তমানে স্থানীয় নারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই কার্যক্রম। দড়ি তৈরি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট পাইকাররা নারীদের বিনামূল্যে হোগলা পাতা সরবরাহ করে থাকেন। প্রতি এক হাজার হাত দড়ির দাম ১১০ টাকা করে দেয়া হয় কারিগরদের। এসব দড়ি নারীদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে পাইকাররা ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। সেখান থেকে হরেক রকম পণ্য তৈরি করে তা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের দড়ির পাইকার মো. সিরাজ মোল্লা জানান, জেলায় প্রায় ৫০ জন পাইকার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা সংগ্রহ করে নারীদের বিনামূল্যে দেন দড়ি তৈরির জন্য। পরে প্রত্যেকের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এসব দড়ি প্রতি হাজার হাত ১১০ টাকায় কেনেন। আর তারা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পান হাজার হাত ২১০ টাকা। বর্তমানে নারীদের মাঝে দড়ি তৈরির আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।

সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের পশ্চিম চরনোয়াবাদ গ্রামের নারী লাকি বেগম ও জাহানারা বলেন, সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা দড়ি তৈরি করে থাকেন। দৈনিক প্রায় ১ হাজার হাত দড়ি তৈরি করা যায়। সংসারে কাজ কম থাকলে আরও বেশি দড়ি বানানো যায়। ভেলুমিয়া চরের নারী রুবিনা আক্তার জানান, পাতাগুলো প্রথমে ২-১ দিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর লম্মা লম্বা এসব পাতাকে ২-৩ ভাগ করে হাত দিয়ে পাকিয়ে দড়ি তৈরি হয়। অনেকেই এখন এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে। চরছিফলী গ্রামের গৃহবধূ রেহানা বেগম ও রাবেয়া বেগম জানান, তারা দীর্ঘ ৬ বছর ধরে দড়ি তৈরির কাজ করছেন। কাজের চাপ বেশি থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের কাজে সহায়তা করেন। তবে পরিশ্রম অনুয়ায়ী তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই কাজের মূল্য বাড়ানোর দাবি তাদের। বিডি ক্রিয়েশন প্রতিষ্ঠানটির ভোলার এরিয়া ম্যানেজার কাজী এনামুল হক বাচ্চু জানান, আমরা ভোলার বিভিন্ন পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে দড়িগুলো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের কারখানায় হোগলা পাতার দড়ির সঙ্গে অন্য উপকরণের সহায়তায় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী তৈরি হয়, যা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে জেলায় মাসে ১ কোটি ২০ থেকে ৩০ লাখ হাত দড়ি তৈরি হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা অফিসের এজিএম (অপারেশন) রবিউল হাসান জানান, হোগলা পাতা দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে পণ্য উৎপাদন আমরাই প্রথম তৈরি করছি। এর বাইরেও পাট, বাঁশ, বেতসহ বিভিন্ন পণ্যের সামগ্রী তৈরি করছি। ভোলার প্রত্যন্ত এলাকার একটা বিশাল নারী সম্প্রদায় এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মদক্ষ হয়ে উঠছেন। নারী শ্রমীকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করার বিষয়টি তাদের বিচেনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ইকবাল হোসেন জানান, জেলায় প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর হোগলা পাতা তৈরি হয়। পাতা দিয়ে দড়ি তৈরি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন আমাদের গ্রামীণ নারীরা।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..