কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনটি একসময়ের আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মোট ১৬ বছর এই আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। ২০০৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই আসনটি দখল করেছিলেন। তার প্রয়াণের পর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আসনটি জয়ী হন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন।
যদিও দীর্ঘদিন ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের প্রভাব তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত অধ্যক্ষ মুসাদ্দেক আলী ভূঁইয়া সাধারণ ভোটারদের কাছে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তেমন পরিচিত নন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর আজিজুর রহমান জার্মানি (হাতপাখা) সামাজিকভাবে পরিচিত হলেও রাজনৈতি প্রভাব কম তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন তার নির্বাচনী সম্ভাবনা সীমিত।
এই নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা মুফতি হেদায়াতুল্লাহ হাদী, যিনি রিকশা মার্কা প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেদায়াতুল্লাহ হাদী একজন বিজ্ঞ আলেম ও দক্ষ সংগঠক। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১০টি জেলার তত্ত্বাবধায়ক যার আন্ডারে ৪৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে।
সংগঠন ও সামাজিক প্রভাব: কিশোরগঞ্জ-১ আসনের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে হাদীর নির্বাচনী কমিটি রয়েছে। এছাড়া তিনি স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং আলেম-ওলামার মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলেমদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক এবং কিশোরগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সামাজিক মর্যাদা তাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তৈরি করেছে।
হাদীর জনপ্রিয়তা শুধু ধর্মীয় নেতার ভূমিকায় সীমাবদ্ধ নয়। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামাজিক ও সাংগঠনিক শক্তি মিলিয়ে তিনি ভোটারদের কাছে বিশ্বস্ত ও সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে দেখা দিচ্ছেন।
ভোটারের আস্থা: কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাধারণ ভোটাররা জানাচ্ছেন, হেদায়াতুল্লাহ হাদী তাদের জন্য একজন স্থায়ী ভরসার নাম। নির্বাচনী লড়াই কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংগঠনিক দিক থেকেও এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নজরকাড়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, “হেদায়াতুল্লাহ হাদী শুধু একজন প্রার্থী নয়; তিনি আমাদের সামাজিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের সাথেও নিবিড়ভাবে যুক্ত। ভোটের সময় আমরা শুধু নীতি নয়, আস্থা অনুযায়ীও ভোট দিই।”
স্থানীয় শিক্ষার্থী ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা মনে করেন, হাদীর প্রভাব স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ়। তার ব্যক্তিত্ব, আলেম-ওলামার সঙ্গে সম্পর্ক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে আসনটি এবার তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ফলাফল ও প্রেক্ষাপট: কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এবারের নির্বাচনী লড়াই রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন চিত্রের সূচনা করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখল থাকা আসনে হেদায়াতুল্লাহ হাদীর সামাজিক ও সাংগঠনিক প্রভাব নতুন ধারা সৃষ্টি করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল শুধু ভোটের সংখ্যা নয়, বরং স্থানীয় আস্থা ও সামাজিক সমর্থনের প্রতিফলনও হবে।
সর্বোপরি, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের ভোটাররা এই নির্বাচনকে কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও সাংগঠনিক একটি নির্বাচনী লড়াই হিসেবে দেখছেন। রিকশা মার্কার প্রার্থী হেদায়াতুল্লাহ হাদীর উত্থান এ আসনের নির্বাচনী ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।