সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
পরপারে পাড়ি জমালেন সাবেক সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক আলহাজ্ব মো: আব্দুল হামিদ বেতাগীতে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা ১৫ জন সাংবাদিককে ’গণমাধ্যম পুরস্কার–২০২৫’ প্রদান তাড়াইলে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত কৃষিবিদ গ্রুপের বিজনেস মিটিং সফলভাবে সম্পন্ন আমতলীতে মৌচাকে ডিল মারাকে কেন্দ্র করে যুবককে হাতুড়ি পেটা রংপুরে র‌্যাবের অভিযানে ফেন্সিডিল উদ্ধার ৪ নারীসহ গ্রেফতার-৬ সাংবাদিককে হুমকি, সেবায় নৈরাজ্য: রহস্যজনক ক্ষমতায় বেপরোয়া ‘হোটেল সিগাল’ প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হলো রেজাউল কবির পলের প্রথম গণসংযোগ

কুয়াকাটা গামী হাজিপুর টোলে দ্বিগুণ টোল আদায়ের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ পরিবহন চালক ও পর্যটক

মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫৭৬৪ বার পঠিত
কুয়াকাটা গামী হাজিপুর টোলে দ্বিগুণ টোল আদায়ের অভিযোগ .................................ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের হাজিপুর সেতুতে সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ হারে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নির্ধারিত নিয়ম উপেক্ষা করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের টোল আদায়কারীরা যাত্রী, পর্যটক ও পরিবহন চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে, রশিদ ছাড়াই প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার টোল আদায় করা হচ্ছে, ফলে সরকারও হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব।

চরম অব্যবস্থাপনা, টোল আদায়কারীদের দুর্ব্যবহার, পণ্যবাহী ট্রাক থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং কৌশলে রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা অনিয়মে চলছে হাজিপুর টোলপ্লাজায়। এতে ক্ষুব্ধ চালক, স্থানীয় বাসিন্দা ও কুয়াকাটাগামী পর্যটকরা।

প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় যানবাহন এই সেতুর মাধ্যমে চলাচল করে। তবে বিশেষভাবে কুয়াকাটা পর্যটনগামী বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, এবং আলিপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দরগামী ট্রাকগুলোর কাছ থেকেই দ্বিগুণ হারে টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় চালকরা জানান, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসন থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মাঝে মধ্যে জরিমানা করা হলেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুনে হাজিপুর সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পায় বরিশালের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেলী ফিলিং স্টেশন, যেটি মোঃ মাহফুজ খান লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ৫,৮৫,৮২,৫০০ টাকায় তিন বছরের জন্য (মেয়াদ জুন ২০২৭ পর্যন্ত) ইজারা নেয়।

অন্যদিকে, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর উপর নির্মিত আন্ধারমানিক সেতুটিও একই প্রতিষ্ঠান ১৫,৫৩,৯৪,৫০০ টাকায় ইজারা নেয়।

যদিও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রতিটি যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট টোলহার নির্ধারণ করেছে, তবে বাস্তবে তা উপেক্ষা করে চলছে অবৈধ আদায়।

সরে জমিনে দেখা যায়, হাজিপুর টোলপ্লাজায় প্রায় প্রতিটি যানবাহন থেকেই নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো রশিদ প্রদান করা হয় না। সরকারি নির্ধারিত ফি অনুযায়ী একবার যাতায়াতের জন্য মিনি ট্রাক ৭৫ টাকা হলেও আদায় করা হয় ১৫০ টাকা, বড় বাস ১০০ টাকা কিন্তু আদায় করে ১৫০-২০০ টাকা , মোটরসাইকেল ৫ টাকা কিন্তু আদায় করা হয় ১০ টাকা করে, মাইক্রোবাস (৮–১৫ সিট) ৪০ টাকা কিন্তু আদায় করা হয়৭০- ৮০ টাকা , হেভি ট্রাক ২০০ টাকা কিন্তু আদায় করা হয়।৩০০-৪০০ টাকা, তিন চাকার মোটর চালিত টমটম করা হয় ৫০-৭০ টাকা।

বরগুনা থেকে আসা মিনি ট্রাক চালক জাকির হোসেন বলেন, তালিকায় ভাড়া ৭৫ টাকা, কিন্তু এখন তারা আদায় করছে ১৫০ টাকা। কোনো প্রতিবাদ করলে টোলকর্মীরা খারাপ আচরণ করে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোটরসাইকেল আরোহী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সাতটি মোটরসাইকেল একসাথে এসেছি। মোট ৭০ টাকা দিয়েছে, কিন্তু কোনো রশিদ দেয়নি। পরে জানতে পারলাম টোল আসলে ৫ টাকা। এভাবে পর্যটকদের কাছ থেকে নিয়মিত বেশি টাকা নেওয়া আমাদের জন্য হয়রানি।

টাঙ্গাইল থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ঢাকা মেট্র-ব-১২- ১২৯৬ এর বাস সুপারভাইজার মোঃ হারুন বলেন, আন্দারমানিক টোল দিয়েছি ১৮০ টাকা হাজিপুর টোল রেখেছে ১৬০ টাকা, হাজীপুর টোল ভাড়া বেশি রেখে থাকলে তো অনিয়ম। ম্যমো চেয়েছি কিন্তু তারা বলেছে লাগবে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিয়ম বহির্ভূতভাবে টোল আদায়ের কারণে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে কুয়াকাটা গামী পর্যটক সহ মহিপুর ও আলিপুরের মৎস্য ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।

মেসার্স বেলী ফিলিং স্টেশন-এর পরিচালক মোঃ মাহফুজ খানের সঙ্গে মুঠোফুলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি তবে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সুপারভাইজার মোঃ আরিফ হোসেন জানায়, আমার জানামতে এইভাবে টোলে কোন বেশি ভাড়া আদায় হয় না। এখন আদায়কারীরা যদি কিছু করে তা আমার জানা নাই। আমার মনে হয় না ওরা তেমন কিছু করে তারপরেও একটু যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। টোল থেকে হাতে লেখা কোন রশিদ দেয়া হয় না সবকিছু ডিভাইস সিস্টেম।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জামিল আক্তার লিমন বলেন, হাজীপুর টোলের ইজারাদার এর সাথে কথা বলে দেখছি। আপনার কাছে কোন গাড়ির নাম্বার থাকলে পাঠান।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেন, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি তাই হাজিপুর প্লাজার ভাড়া সম্পর্কে তেমন অবগত না। যদি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোন অভিযোগ পেয়ে থাকি তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের উদাসীনতা ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে ইজারাদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রশিদ ছাড়া অর্থ আদায়, পর্যটকদের হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী টোল আদায়ে স্বচ্ছতা ও রশিদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও হাজিপুর সেতু টোলপ্লাজায় তা মানা হচ্ছে না। ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন, আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লাখ টাকার।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..