কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানায় দায়িত্ব পালন করা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাব্বির রহমানের নাম এখন অনেকের কাছেই সততা, কঠোরতা ও মানবিকতার সমার্থক। একাধারে দক্ষ প্রশাসক, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজপ্রাপ্য পুলিশ কর্মকর্তা, এই দুই ব্যতিক্রমী পরিচয়ে তিনি তাড়াইলবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন খুব অল্প সময়েই।
তাড়াইলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন উত্তেজনাকর ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দুলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে উপজেলার দায়িত্ব পান ওসি সাব্বির রহমান। আগুনঝরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিনি প্রমাণ করেন একজন দৃঢ়চেতা পুলিশ কর্মকর্তার সঠিক নেতৃত্ব অপরাধ দমনে কতটা কার্যকর হতে পারে।
ওসি সাব্বির রহমান দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই দালাল, তদবিরকারীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কঠোর অবস্থান নেন। থানাকে দালালমুক্ত রাখতে তিনি সচেতনতা বাড়ান সাধারণ মানুষের মধ্যে।
মাদক, জুয়া, চুরি, ইভটিজিং, যে কোনো অপরাধ দমনে তিনি ছিলেন কঠোর এবং নিয়মিত মাঠে উপস্থিত। প্রতিটি ইউনিয়নে সচেতনতামূলক সভা, প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং জনগণকে আইনের কাছে আনার জন্য নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
থানায় এসে কারও অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার দিন শেষ হয়েছিল তার সময়ে। যে কেউ প্রয়োজনেই সরাসরি ওসির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেত। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, গণমাধ্যমকর্মী, পাড়া-মহল্লার প্রভাবশালী সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখে সমান আচরণ করেছেন তিনি।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে অপরাধ প্রবণ এলাকার মানচিত্র আয়নার মতো পরিষ্কার করে ফেলেন তিনি। কোথায় কোন চক্র সক্রিয় তার ছিল বিস্তারিত ধারণা।
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে তাড়াইলের গ্রামগঞ্জ দ্রুতই ফিরে আসে নিরাপত্তার আবরণে। মানুষের আস্থার জায়গা হয় থানার ওপরে, আর আস্থার নাম হয়ে ওঠে ওসি সাব্বির রহমান।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো তাড়াইল থানার ওসিরও বদলি করা হয়েছে। তার বিদায়ের খবরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে শোক ও উদ্বেগ।
মানুষের প্রশ্ন, নতুন কর্মকর্তা কি পারবেন এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিতে এই জটিল পরিবেশ?
তাড়াইলের নিরাপত্তার গায়ে যে অদৃশ্য সুরক্ষাবলয় সাব্বির রহমান তৈরি করেছিলেন, তার অনুপস্থিতিতে সেই দেয়াল কতটা দৃঢ় থাকবে এখন সেটিই তাড়াইলবাসীর বড় ভাবনা।